দশমিনায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করলেন ব্যারিস্টার সুমন

সুমন
  © ফাইল ছবি

পটুয়াখালীর দশমিনায় টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করায় শিক্ষকের বকাঝকা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, স্কুলগুলো বেতন নিবে কেন? আমি তো সরকার হিসেবে ব্যবস্থা করবো, শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে আমি ব্যবস্থা করবো। যাতে এই বেতনই আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়া যায়। একটা স্কুল এমপিও করার মধ্য দিয়ে, সরকার কি পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে শিক্ষকদের। তারপরও এত টাকা লাগবে কেন? আপনি সব জায়গা যদি কন্টোল করতে না পারেন তাহলে দশমিনার মতো আরও ছেলে আত্মহত্যা করবে। তবে এখান থেকে বের হতে একমাত্র সরকারই যদি একটা জাগরণ গড়ে তুলেন তাহলে এখান থেকে কিছু মুক্তি পেতে পারি।

শুকবার (১৩ অক্টোবর) বেলা ৪টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে স্কাউটস্ ট্রেনিং সেন্টার মাঠে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি বনাম কালিয়াকৈর উপজেলা ফুটবল একাডেমি মধ্যকার ফুটবল খেলার আগ মুহুর্তে ব্যারিস্টার সুমন এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: ‘নভেম্বরে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা’

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, পটুয়াখালীর দশমিনাকে যে ছাত্রটা বেতন দিতে না পেরে অপমানবোধ থেকে সে যে সুইসাইড করলো মারা গেল ছাত্রটা। এটা শুধু আলাদা ঘটনা ভাবলে হবে না, এরকম ঘটনা আরও ঘটে। এমন একটা দেশে জন্মেছি এই দেশে প্রতি বছরই ভর্তি হতে হয়। ভর্তির জন্য টাকা দিতে হয়। আপনি স্কুলে যাবেন স্কুল তো পুরা একেবারে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত। আপনি তো ৬ষ্ঠ শ্রেণীতেই ভর্তি হলেন। আপনি কি জানেন, সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয়, অষ্টম শ্রেণীতেও ভর্তি হতে হয়। মানে আপনার স্কুলেই আপনি প্রতি বছর ভর্তি হতে হবেন, এটার জন্য আপনি টাকা দিবেন, এগুলো রাষ্ট্রের দায়। রাষ্ট্র যদি ভাল ভাবে থাকতো তাহলে, কোনদিন রাষ্ট্রের এরকম একজন নাগরিক টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেনা, বেতন দিতে পারে না! এই অভাবে সে স্কুলে থাকবে না?

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আমরা কতটা আলাদা। বিদেশে কখনো কারও এ চিন্তাই করা লাগে না, যে বেতন দিতে হবে! এই কনসেপ্ট একমাত্র বাংলাদেশেই আছে আমাদেরকে বেতন দিতে হয়, বেতন না দিলে বের করে দেয়া হয়। একটা এলাকায় কত সফল মানুষ থাকে, তারা চাইলে কিন্তু অনেক মানুষকে বেতন দিতে পারেন। অনেক মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সারাদেশ ঘুরে ফুটবলে আমি মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের গড়ার বার্তা দিচ্ছি। বেশ সাড়াও মিলছে।

তিনি বলেন, আমরা দলমত নির্বিশেষে অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে গিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক কারণে হোক, ধর্মীয় কারণে হোক আমরা এক জনের অনুষ্ঠানে আরেকজন যেতে চাই না। কিন্তু একমাত্র ফুটবল বা স্পোর্টস যেখানে আছে, সেখানে সবধরনের মানুষ, সব ধর্মের মানুষ, সব দলের মানুষ একত্রিত হয়। কোন এক জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের কথা বলবেন সব মানুষ কিন্তু একত্রিত হয় না। ফুটবল টা আমি দেখলাম অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা, অথচ দুখের বিষয় এই ফুটবলটাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। এই ফুটবলটাকে আমি ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি থাকি না থাকি, রাজনৈতিক ভাবে আমার অবস্থান থাকুক না থাকুক। কিন্তু একটা জায়গা দিয়ে যাচ্ছি। যে জায়গায় আপনি বাংলাদেশের সব জায়গার মানুষকে পাবেন, সব দলের মানুষকে পাবেন সেখানে আপনি বাংলাদেশের কথা বলতে পারবেন। আর বাংলাদেশের কলা যদি বলতে না পারেন শুধু যদি আপনি আপনার দলের কথা বলেন, তাহলে তো আপনার দলের মানুষকে শিক্ষিত করলেন, আপনার দলের মানুষকে আপনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আপনার দলের মানুষকে আপনি সচেতন করলেন। কিন্তু আপনার দলের বাইরেও তো মানুষ আছে। তাদেরকে আপনার বাংলাদেশের কথা শুনাতে হবে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনাতে হবে। বাংলাদেশে কিকি সমস্যা আছে এগুলো শুনাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পরবর্তী জেনারেশন তারা কিন্তু পুরোটাই কম্পিউটার বেজড। এরা আইফোন আর ফোন ছাড়া এরা কিন্তু ফিজিক্যালই প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকেও ফিরিয়ে আনতে তাদের মাঠে আনতে হবে। আপনি শুধু শ্লোগান দিবেন মাদক দুর করুন, মাদক থেকে বেরিয়ে আসুন কিন্তু বেরিয়ে এসে এরা কি করবে, কি করলে মাদকে যাবে না। অথচ ফুটবল মাঠের মধ্যে আপনি বাণিজ্য মেলা দিচ্ছে, ফুটবল মাঠে হাট-বাজার ইজারা দিচ্ছেন। এর মানে আস্তে আস্তে ফুটবল মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পরে আপনি হয়তো ইন্ডাষ্টি পাবেন, আপনি উন্নয়ন পাবেন, কিন্তু মানুষ পাবেন না বসবাস যোগ্য এই দেশটা পাবেন না। আমার কাছে মনে হয়েছে এই বার্তাটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের জন্য এই ফুটবল মাঠেই একটা নতুন বাংলাদেশ একটা নতুন ফুটবল গড়ে তুলতে হবে।

ফুটবল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির মুরাদ প্রমুখ।