জয়পুরহাটে ছয় মাসে ২৩৭ ট্রান্সফরমার চুরি

জয়পুরহাটে
  © ফাইল ছবি

জয়পুরহাটে কিছুতেই থামছে না বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের ট্রান্সফরমার চুরি। ফসলের মাঠ থেকে প্রায় প্রতি রাতেই চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। এর ফলে ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের মালিকরা। এমনকি রাত্রিকালীন পাহারাদারদের হাত-পা বেঁধে, মারধর করেও চুরি করছে। ছয় মাসে ২৩৭ ট্রান্সফরমার চুরি করছে চুরিদল।

গত ছয় মাসে জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় বিদ্যুত্চালিত গভীর-অগভীর নলকূপের ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে বলে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে। চুরি রোধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মামলাও করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের বিল হাওয়াই মাঠে গত ১৭ নভেম্বর রাতে জিয়াপুর গ্রামের সেচ মালিক ছানোয়ার কাজী, আবুল কালাম ও আজিজুল ইসলামের তিনটি বিদ্যুত্চালিত গভীর নলকূপের ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়।দুর্বৃত্তরা ছানোয়ার কাজীর গভীর নলকূপের রাত্রিকালীন পাহারাদার যষ্টি চন্দ্র দাসের হাত-পা বেঁধে তাঁকে বেদম প্রহার করে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়। একই রাতে কালাম ও আজিজুলের ছয়টি ট্রান্সফরমারও চুরি হয়। চুরি হওয়া ৯টি ট্রান্সফরমারের দাম ছয় লাখ ১৫ হাজার ৫৩৮ টাকা বলে দাবি করেছেন মালিকরা। 

ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় নলকূপের মালিকরা ফসলে সেচ দিতে মহাবিপাকে পড়েছেন। টাকা দিতে না পারলে সেচকাজ বন্ধ থাকবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় আলুর মৌসুম। সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। একইভাবে গত মঙ্গলবার রাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পলি কাদোয়া গ্রামের সুলতান হোসেনের তিনটি টান্সফরমার চুরি হয়েছে। গত ৮ নভেম্বর রাতে আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি ইউনিয়নে ১২টি ট্রান্সফরমার চুরি করে চোরের দল।

ওই রাতে আক্কেলপুরের মুনজিয়া গ্রামের গভীর নলকূপ মালিক মতিয়ার রহমান ও ফরিদ উদ্দীনের ছয়টি, কৃষণোকোলা গ্রামের আবু বক্করের চালকলের তিনটি এবং শ্যামগ্রামের আজিজুর রহমানের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সেচযন্ত্র এবং শিল্প-কারখানায় সাধারণত ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি পর্যন্ত ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ জন্য শক্তি অনুযায়ী এসব ট্রান্সফরমারের দামও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমবার চুরি হলে পাঁচ কেভির একটি ট্রান্সফরমার ৮০ হাজার, ১০ কেভির এক লাখ ২০ হাজার, ১৫ কেভির এক লাখ ৫০ থেকে এক লাখ ৬০ হাজার এবং ২৫ কেভি হলে আরো বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। প্রতিটি সেচযন্ত্রে তিনটি করে ট্রান্সফরমার একত্রে একটি বক্সে থাকে। প্রথমবার চুরি হলে সেই গ্রাহককে ওই অর্ধেক মূল্য জমা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। দ্বিতীয়বার চুরি হলে গ্রাহককে সমুদয় টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়।

সূত্রটি জানায়, চলতি নভেম্বর মাসের ২২ দিনে জয়পুরহাটে ৬৫টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে আক্কেলপুর উপজেলায় ২৬টি পাঁচবিবিতে ১৭টি, সদর উপজেলায় ১১টি, ক্ষেতলালে ১০টি এবং কালাই উপজেলায় একটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চার মাসে জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৭২টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৬০টি, আগস্টে ৪৭টি, সেপ্টেম্বরে ১৬টি এবং অক্টোবর মাসে ৪৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। অর্থাৎ চলতি নভেম্বর মাসের ২২ দিনসহ জুলাই থেকে জেলায় ২৩৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের আবুল কালাম মণ্ডল জানান, চুরি যাওয়ায় তাঁর তিনটি ট্রান্সফরমার কিনতে এখন দুই লাখ টাকা প্রয়োজন। কষ্ট করে টাকা জোগাড় হলেও মারপিটের ভয়ে মাঠে ট্রান্সফরমার পাহারায় লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. ইউসুফ আলী ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘কিছুতেই ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামার তার বের করে চোরেরা খোলস ফেলে রেখে যায়।’

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। চোরচক্রকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।’

 


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ