আগুনে পোড়া চিনি মিশছে কর্ণফুলীতে; মরে ভেসে উঠছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী

আগুন
  © সংগৃহীত

গত পরশু বিকাল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের গুদামে আগুন লাগে। এর প্রায় দুইদিন পার হয়ে গেলেও পুরোপুরি নেভিনি আগুন। আজ বুধবার (৬ মার্চ) দুপুর ২টার দিকেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভাতে দেখা গেছে।

সুগার মিলে লাগা এই আগুনে ১ রাখ টন চিনি পুড়ে গেছে বলে জানা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে পোড়া চিনি তরল আকারে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। এসব তরল বিভিন্ন খাল ও নালা বেয়ে মিশছে কর্ণফুলি নদীতে। এতে নদীর ছোট মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষিত পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। 

প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ছে আগুনে। এতে চিনি গলে কালো আলকাতরার মতো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। কারখানার দুইপাশে নালা হয়ে বেরিয়ে আসছে কালো রঙের এসব তরল। এরপর রাস্তা উপচে খাল-নালা হয়ে মিশছে ২০০ মিটার দূরে কর্ণফুলী নদীতে। বিপুল এ বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে নদীর পানি। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণফুলির পানি দূষিত হয়ে নদীর বুকে ভেসে উঠছে নানা প্রজাতির মরা মাছ। এসব মাছ ধরতে নদীর পাড়ে ভীড় জমিয়েছেন স্থানীয়রা। কেউ জাল দিয়ে, কেউ খাঁচা বা ঝুড়ি এমনকি হাত দিয়েও মাছ ধরছেন কেউ কেউ। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও নদী বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘চিনিমিশ্রিত এসব পানির কারণে নদীর পানির স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে। এমনিতেই কর্ণফুলি নদীর এই অংশে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম। এখন আরও কমছে এটির পরিমাণ, যার প্রভাব সরাসরি মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ওপর পড়ছে।’

গত সোমবার বিকেল ৪টায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন চিনি কলের গুদামে আগুন লাগে। সেই আগুন নেভাতে এখনও কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট। 

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই চিনির কারখানায় আগুন লাগার পর বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে তারা সংবাদ পায়। এরপর কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি, চন্দনপুরা থেকে দুটি, কালুরঘাট থেকে দুটি, আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের একটিসহ মোট ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে আরও কয়েকটি ইউনিট যোগ দেয়। এছাড়া যোগ দেয় নৌবাহিনী ও বিমান বাহনী। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরোপুরি নেভেনি। আগুন পুরোপুরি নেভাতে এখনও কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।