কালাইয়ে চাষিরা পানির সেচ মূল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে

কালাই
  © সংগৃহীত

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় ইরি-বোরো ধানের জমিতে স্থানীয় পর্যায়ে পানি সেচ মূল্য নির্ধারণ নিয়ে অরাজকতা চলছে।নির্দিষ্ট সেচ নীতিমালার অভাবে বিঘা প্রতি মোটা অংকের টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।উপজেলা সেচ কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা আর উৎকোচ বাণিজ্যের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে কৃষকরা।উপজেলা সেচ কমিটির নির্ধারিত সেচ মূল্যের চাইতে বিঘাপ্রতি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা।এদিকে নলকূপ মালিকরা বলছেন তেলের দাম ও পাহারাদারের মজুরি বেশি থাকায় পানি সেচে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,এবারে ইরি-বোরো মৌসুমে ১২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হবে।গতবছরের তুলনায় এবারে প্রায় ২’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হচ্ছে।ইরি-বোরো জমিতে পানিসেচের মূল্য পরিশোধের জন্য প্রতিবিঘায় ২৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।যা হেক্টর প্রতি প্রায় ১৭ হাজার টাকা।উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে ৭০৭টি ও ডিজেল চালিত ১৬টি শ্যালোমেশিন রয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইরি-বোরো ধান চাষে পানি সেচ নিয়ে গভীর ও অগভীর নলকুপ মালিকদের মাঝে অনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।বিঘাপ্রতি পানি সেচ মূল্য ৩০০০ থেকে ৩৫০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।এবারে নলকূপ মালিকরা পানি সেচ মূল্য গতবছরের চেয়ে এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছে।এবিষয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা উপজেলা সেচ কমিটির কাছে মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পায়নি।  উল্টো কৃষকদের ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে,ধানের মূল্য বাড়লে,পানি সেচের মূল্যও বাড়বে।কর্মকর্তাদের সাথে গোপন আতাঁতের কারণে সেচ মালিকরা পানি সেচের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবছর গভীর নলকূপ মালিকরা প্রতিবিঘা জমিতে পানি সেচের মূল্য বাবদ ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা নিয়েছে।কিন্তু এবারে তা বেড়ে ৩০০০ হাজার টাকা করেছে।উপজেলার পৌর এলাকার সরদারপাড়ার গভীর নলকূপ মালিক বাদেশ আলী রুপচান মিয়া এবারে কৃষকদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি ৩০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০০ টাকা নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ওই এলাকার আমিরুল ইসলাম,বুলবুল আহমেদ,রেজ্জাক আলি,রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন,‘পানি সেচের মূল্য এতো বেশি হলে আর ধানের আবাদই করা যাবে না।আবাদে শুধু খরচ-ই!কিষাণপাট,সার,ওষুধ,পরিচর্যা করতেই অনেক খরচ।আমরা শুনেছি সেচের পানির জন্যে সরকার ২০ শতাংশ করে টাকা ভুর্তুতি দিয়েছে। সে টাকা তো চোখে দেখি না।’

উদয়পুর ইউনিয়নের চেঁচুরিয়া গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “পানির ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবছর আরও ৩টি ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বসানো হয়েছে। বর্তমানের ৫টি স্যালো মেশিন দিয়ে নিজের জমি ছাড়াও এলাকার ১৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জমিতে পানি সেচ দিচ্ছি।পানির মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,ডিজেল ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে।এছাড়া শ্যালো মেশিন ও খুচরা যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। সেচযন্ত্র চালাতে এবং পানি সরবরাহ করতে লোক রাখতে হয়।সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকায় পানি বিক্রি করার পরেও পোষাচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা সেচ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ও কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন,'চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত পানির মূল্য নেওয়ার অভিযোগ এখনো কোনও এলাকা থেকে পাইনি। চুক্তিভিত্তিক পানি নেওয়াতে কেউ কৃষকদের বাধ্য করলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি মো: আবুল হায়াত বলেন, ‘সরকারিভাবে পানির দাম নির্ধারণ করা আছে। কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত পানির দাম নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মন্তব্য