৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালানোর সময় জাল ভিসাসহ বিমানবন্দরে ধরা

কালাই
  © সংগৃহীত

মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে তিন বছর আগে কালাই উপজেলার ছয় যুবকের কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা প্রতারণা করে নিয়েছে জিন্দারপুর গ্রামের সুলতান মাহমুদ।টাকা পেয়ে টালবাহানা শুরু করেন।পরে এক পর্যায়ে তাজিকিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।কিন্তু জাল ভিসার  অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদেরকে ফিরে আসতে হয়।ছয়দিন ধরে তারা দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন।এখন তারা আর বিদেশ যেতে চান না। টাকা ফেরত নিয়েই নিজ বাড়িতে ফিরতে চান।না হলে দালালের বাড়িতেই সবাই শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহুতি দেবেন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে গিয়ে ওই ছয় যুবকের সঙ্গে কথা হলে তারা এ কথা জানান।

দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকরা হলেন– আতিকুল ইসলাম,খায়রুল ইসলাম,আব্দুল ওয়াদুদ,আলামিন তালুকদার,মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান,জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের। 

জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন।এলাকায় তাঁকে মাবুদ নামে সবাই চেনেন।তিন বছর আগে সুলতান মাহমুদ পাঁচগ্রাম,মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রামের ছয়জন যুবককে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ৩৩ লাখ টাকা নেন।এরপর থেকেই টালবাহানা শুরু করেন।ছয় মাস আগে তাজিকিস্তানে পাঠানোর কথা হলে তাতেই রাজি হন যুবকরা।চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাজিকিস্তানে যাত্রার উদ্দেশে ঢাকায় যান তারা।২০ মার্চ রাতে টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা উপস্থিত হন।কিন্তু এয়ারপোর্টে চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন তাদের ভিসা,বিএমইটি,স্মার্ট কার্ড ভুয়া।শুধু বিমানের টিকিট ছিল আসল।এয়ারপোর্ট থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। 

গত ছয় মাস আগেও মাবুদ আতাহার গ্রামের আমিরুল ইসলাম,জিন্দাপুর গ্রামের মোহসিন আলী,বেলগাড়িয়া গ্রামের ফয়সাল,মহেশপুর গ্রামের রিমন,পাঁচগ্রামের মোস্তফাসহ অনেককেই একই কৌশলে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন।তারা সেখানে কাজ না পেয়ে মাবুদের লোকজনের কাছে বন্দি জীবনযাপন করছেন।   

বৃহস্পতিবার মাবুদের বাড়িতে কথা হয় ভুক্তভোগী ছয় যুবকের সঙ্গে।তারা জানান,জাল কাগজপত্রে
র কারণে এয়ারপোর্টেই তাদের আটক করতে চেয়েছিল পুলিশ।অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর তাদের ছেড়ে দেন।বিমানবন্দর থেকে এসে সরাসরি এ বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার রাতে মাবুদের বাড়িতে বৈঠক বসে।কিন্তু মাবুদ অবস্থা বেগতিক বুঝে জাতীয় পরিসেবা ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।তাদেরও থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে বলেন পুলিশ।কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুরাহা না হচ্ছে,ততক্ষণ তারা এ বাড়িতেই অবস্থান করবেন বলে পুলিশকে জানিয়ে দেন। 

ভুক্তভোগীদের একজন আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন।পুলিশ নয়,নিজেরাই এর সমাধান করবেন।টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এই বাড়ী থেকে যাবেন না বলে জানান তিনি। 

আরেক ভুক্তভোগী আবু তাহের বলেন,
মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারলো না।তাজাকিস্তানে যাওয়ার দিন কেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদেরকে ফাঁসানো হল!আমরা আর বিদেশ যাব না,টাকা ফেরত চাই।অবস্থা বেগতিক বুঝে মাবুদ ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।আমাদেরকে থানায় এসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বললে,অভিযোগ না করায় পুলিশ মাবুদকে ছেড়ে দেয়।তখন থেকে সে পলাতক।

জিন্দারপুর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রাজা মিয়া বলেন,মাবুদ একজন ধোঁকাবাজ।ভুক্তভোগীরা কেন থানায় অভিযোগ না করে তার বাড়িতে অবস্থান করছেন বুঝতে পারছি না।তারা অভিযোগ না করায় পুলিশ বাধ্য হয়েই মাবুদকে ছেড়ে দিয়েছে।এখন সে পলাতক।   

এ বিষয়ে কথা বলতে মাবুদের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়।তিনি বলেন,যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদের পাঠানো হয়েছে মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে।আমি কিছুই জানি না। আমি পলাতক নই।তাদের টাকার ব্যবস্থা করতে আমাকে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হচ্ছে । 

ছয় মাস আগে মালয়েশিয়ায় যাদের পাঠিয়েছেন তারা এখনও বন্দি–এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,তারা কাজ পাননি।তবে ভালো আছেন। তাদের যা খরচ লাগছে দেওয়া হচ্ছে।কয়েকদিনের মধ্যে তাদেরও ব্যবস্থা হবে।    

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন,মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


মন্তব্য