ইউটিউব দেখে ব্যাংক ডাকাতি শেখেন আরিফুল

রাজধানী
  © সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুরে মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী হাসান মাহমুদকে হত্যার ঘটনায় আরিফুল ইসলাম (২৭) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আরিফুল সেই ব্যাংক বুথে টাকা লুট করার পরিকল্পনার আগে তিনি ইউটিউব দেখে ব্যাংক ডাকাতি শেখেন। এরপর সেই কাজে নামতে যন্ত্রাংশ হিসেবে গুলিস্তানের স্বাধীন বাংলা মার্কেট থেকে হাতুড়ি ও শাবল কিনেছিলেন। পরে গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি কেনেন। তার চিন্তা ছিল যেখানে লোকজন কম সমাগম হয় এমন কোনো এলাকার ব্যাংকের বুথকে তিনি টাকা লুটের স্থান হিসেবে বেঁছে নেবেন। 

সেই মোতাবেক শাহজাদপুরের মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথকে টার্গেট করেন। ঘটনার আগে রেকিও করে আসেন তিনি। এরপর ঘটনার আগে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সেই এলাকায় অবস্থান করেন। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ওই সময় নিরাপত্তা কর্মী তাকে বাধা দিলে আরিফুল তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। পরে পালিয়ে যান।

তবে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আরিফুলের দাবি, তিনি আসবাবপত্র বিক্রির ব্যবসা করতেন। পরে পাথর বিক্রির ব্যবসা শুরু করলে সেটিতে ক্ষতির সম্মুখীন হন ও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণ শোধ দিতে তিনি তার কিডনী বিক্রিরও চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায় তিনি মনস্থ করেন ব্যাংক ডাকাতি করে ঋণের টাকা শোধ করবেন। সেই কারণে সেদিন তিনি শাহজাদপুরে ব্যাংক লুট করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মী দেখে ফেলায় তাকে হত্যা করেন। 

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এর আগে, আরিফুলকে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ডিবি।

গ্রেফতারকৃত আরিফুল যা জানিয়েছে, সে গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বিভিন্ন অফিস ও বাসাবাড়ির আসবাবপত্র পরিবহনের কাজ করতেন। গত ২ থেকে ৩ বছর আগে তিনি তার বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শে এই ব্যবসার পাশাপাশি ইট, বালি, পাথর সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এ ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কারণে তিনি ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি তার একটি কিডনী বিক্রির চেষ্টায় মিরপুর এলাকায় লিফলেট ছাড়েন। কিন্তু কিডনী বিক্রি করতে পারেননি। পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করতে না পারায় তারা তার বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। পাওনাদারদের চাপে ও ভয়ে তিনি গত কয়েক মাস ধরে পরিবার পরিজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ও রাজধানীর মিরপুর-১ সহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন। এরপর কিভাবে টাকা পরিশোধ করবেন সেই চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করতে থাকেন। তিনি এটিএম বুথ লুট করার চিন্তা করেন।

গ্রেফতারকৃত আরিফুল ডিবির কাছে দাবি করেছেন তিনি ইউটিউবে থাকা ভিডিও দেখে ব্যাংক/এটিএম বুথ ডাকাতির শেখেন। এরপর ডাকাতি করতে খুন করে হলেও এটিএম বুথের টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট থেকে হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, মিরপুর পল্লবী মিল্লাত ক্যাম্প মোড় থেকে চাপাতি, সাবল, চাকু ও মিরপুর স্টেডিয়ামের ফুটপাত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একটি জার্সি কেনেন। এরপর ভাবতে থাকেন কোথায় লোকজন কম সমাগম হয়। সেই এলাকাকে বেঁছে নিতে ঢাকায় ঘুরতে থাকেন। এরপর গুলশানের শাহজাদপুরের মাইশা চৌধুরী টাওয়ারের নিচে থাকা মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথকে বেঁছে নেন তিনি। ঘটনার রাতে তিনি তুরাগ বাসে চলে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। সেখানে সারা রাত অবস্থান করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ শেষে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে এটিএম বুথে প্রবেশ করার সময় বুথের নিরাপত্তা কর্মী হাসান মাহমুদ তাকে বাধা দেন। সেই সময় তিনি তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল, চাপাতি দিয়ে এটিম বুথ ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট চেষ্টা করেও এটিএম বুথ ভাঙতে ব্যর্থ হন। পরে ব্যবহৃত হাতুড়ি, হেমার, ছেনি, সাবল, চাপাতি, ব্যাগ ঘটনাস্থলে রেখে একটি ছোট চাকু নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর সাড়ে পাঁচটায় অছিম পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন এবং গায়ে পরিহিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি খুলে সেটি সিটের নিচে রাখেন। মিরপুরে নামার সময় তার পরনের জার্সিটি কালশী রাস্তার মাথায় ডিভাইডারের ওপর রেখে দেন। 

গত ১০ এপ্রিল ভোর পাঁচটার দিকে মধুমতি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড হাসান মাহমুদকে কুপিয়ে হত্যা করেন আরিফুল। পরে এ ঘটনায় নিহতের ভাই মাহফুজুর রহমান রুমেল বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় আরিফুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।