আমদানির মধ্যেই কেজিতে ৮০ টাকা বাড়লো জিরার দাম

জিরা
  © ফাইল ছবি

এক সপ্তাহের মতো আছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার। এসময় মসলা জাতীয় পণ্য জিরার বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যটির আমদানি বাড়িয়েছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। তবে আমদানি বাড়লেও ঊর্দ্ধমুখি জিরার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৮০টাকা। দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি জুন মাসে বন্দর দিয়ে জিরার আমদানি কিছুটা বেড়েছে। এমাসের ১৯ জুন (সোমবার) পর্যন্ত ১২ কর্মদিবসে ৪৯টি ট্রাকে এক হাজার ৪০২ টন জিরা আমদানি হয়েছে।

এদিকে সরেজমিনে হিলির মসলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের সব মসলার দোকানেই জিরার ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে যে জিরা ৭শ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, সেই জিরা এখন ৮শ ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি দুদি আগেও ৮শ ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল জিরা।

আরও পড়ুন:- পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

এক ক্রেতা জানান, সাড়ে ৭শ টাকার জিরার কেজি এখন বেড়ে ৮শ ৩০টাকা হয়ে গেছে। যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে সে হারে তো আমাদের আয় বাড়ছেনা। দামটা যদি কম থাকে তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের জন্য একটু সুবিধা হয়। 

অপর এক ক্রেতা বলেন, আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এসময়ে মসলার বাড়তি চাহিদা থাকে। তাই হিলিতে এসেছিলাম মসলা কিনতে। কিন্তু ঈদের আগেই মসলার বাজার বেশ চড়া। এত দাম বাড়লে আমাদের মত সাধারণ মানুষ কিভাবে জিরা কিনবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

হিলি বাজারের এক মসলা দোকানী বলেন, সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেওয়ায় ঈদুল ফিতরের পর থেকেই জিরার দাম হঠাৎ করেই ঊর্দ্ধমুখী হয়ে যায়। আমরা যেসব মোকাম ও আমদানিকারকদের কাছ থেকে জিরা ক্রয় করি, সেখানে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামেই ।

হিলি স্থলবন্দরের এক জিরা আমদানিকারক জানান, জিরা আমদানিতে প্রচুর ডলারের প্রয়োজন হয়। তবে সব ব্যাংক জিরার এলসি খুলতে চায়না। এতে করে বন্দরের সব আমদানিকারক ইচ্ছা করলেও জিরা আমদানি করতে পারছেনা। জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভারতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জিরার উৎপাদন খানিকটা কম হয়েছে। এতে ভারতের বাজারেই জিরার দাম খানিকটা ঊর্দ্ধমুখী।

আরও পড়ুন:- চিনির দাম না বাড়ানোর দাবি ক্যাবের

তিনি আরও বলেন, দেশে ডলার রেট বাড়ায় কেজি প্রতি ১৫ টাকার মত বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি জিরার আমদানি শুল্ক বাবদ পরিশোধ করতে হতো ১০৫ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১শ ২০ টাকা। এতে জিরার দাম বাড়ছে। ভারত থেকে প্রতিটন জিরা প্রকারভেদে এক হাজার ৭শ ৫০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু করে এক হাজার ৮শ ৫০ মার্কিন ডলার মুল্যে আমদানি করা হচ্ছে। কাস্টমস প্রতিটন জিরা এক হাজার ৮শ ৫০ মার্কিন ডলার মূল্য হিসেবে শুল্কায়ন করছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জিরার দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও জিরার দাম বাড়ছে।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে গতবছরের তুলনায় জিরার আমদানি অর্ধেকে নেমে এসে এসেছে। এতে করে বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরনের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি ব্যাহত হচ্ছে। তবে ঈদকে ঘিরে সম্প্রতি বন্দর দিয়ে জিরার আমদানি কিছুটা বেড়েছে। এতে আগের তুলনায় রাজস্ব আহরন বাড়বে বলেও জানান তিনি।  

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, গত সোমবার বন্দর দিয়ে একদিনেই ৭টি ট্রাকে ১শ ৯৯ টন জিরা আমদানি হয়েছে। বন্দর দিয়ে জিরার আমদানি বাড়ার ফলে বন্দর কতৃপক্ষের যেমন দৈনন্দিন আয় বেড়েছে তেমনি বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের আয় খানিকটা বেড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুর এর সহকারি পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, ঈদের সময় যেনো মসলা জাতীয় পণ্যের মুল্যবৃদ্ধি না হয় সেটি রুখতে এবং দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করছি। কেউ যদি অহেতুক কোন পণ্যের দামবৃদ্ধি করে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অর্থিক জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।