দেশের বাজারে ১৪ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ!

সোনা
  © ফাইল ফটো

ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতি ভরি স্বর্ণের বর্তমান দাম ১ লাখ ৭৭৭ টাকা। ২০০৯ সালে দেশের বাজারে একই মানের স্বর্ণ পাওয়া যেত ২৬ হাজার ৩৫১ টাকায়। গত ১৪ বছরে আমদানিকৃত মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ। দীর্ঘদিন ধাপে ধাপে বাড়লেও গত দু’বছর স্বর্ণের বাজারে বিরাজ করছে ব্যাপক অস্থিরতা। এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ এক লাফে ভরিতে ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বেড়ে রেকর্ড গড়ে। দেশে বেশির ভাগ আমদানি পণ্যের মুনাফার মোটামুটি হার নির্ধারিত এবং সেভাবেই দর ধরা হয়। স্বর্ণই একমাত্র ‘বলগাহীন পণ্য’, যার দাম নির্ধারণে ব্যবসায়ীরা কোনো নিয়মের ধার ধারেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দর নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় স্বর্ণকে ব্যবসায়ীরা ‘শাঁখের করাত’ বানিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। তারাই ইচ্ছামতো বিক্রির দর ঠিক করছেন; আবার কেনা কিংবা স্বর্ণালংকার অদল-বদলের হারও বেঁধে দিচ্ছেন। যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ দেশের বাজারে দাম নির্ধারণের একমাত্র নিয়ন্ত্রক স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের দাবি, বিশ্ববাজারকে মানদণ্ড ধরে দেশে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেন তারা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব, ডলার সংকটে বৈধ পথে আমদানিতে জটিলতা, ব্যাগেজ রুলের অধীনে দ্বিগুণ আমদানি শুল্কের কারণে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে বর্তমানে বিক্রি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় নিজেরাও ভুক্তভোগী বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

দেশে অস্বাভাবিক দামের কারণে শুধু মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চ মধ্যবিত্ত অনেকেই এখন বিয়েসহ বিভিন্ন উপলক্ষে স্বর্ণের অলংকার কেনা বাদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ঠিক কী পদ্ধতিতে দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে সাধারণত স্বর্ণের দাম বাড়ে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। নিয়মের মধ্যে দাম নির্ধারণ ও কার্যকরী আমদানি নীতিমালা হলে অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোর প্রবণতা কমবে। শুল্কহার পুনর্বিবেচনা ও আমদানির জন্য বিকল্প উৎস খোঁজার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে নির্দিষ্ট হার যুক্ত করে দেশে স্বর্ণের দর নির্ধারণ করা যেতে পারে।

দ্রুত নীতিমালার অধীনে না আনলে স্বর্ণের বাজার মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

দেশে স্বর্ণের দাম কত হবে, তা নির্ধারণ করে বাজুস। সংগঠনটি বলছে, স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতু সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কিটকো ডটকমের দরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে দাম বাড়ানো বা কমানো হয়। তবে বাস্তবে দুটি দরে ফারাক থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট গোল্ডপ্রাইসের তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে ৪ আগস্ট প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৯৩২ দশমিক ৯০ ডলার। এটি ২০২০ সালের চেয়ে ১৩৭ ডলার কম। এ হিসাবে বাংলাদেশে এখন স্বর্ণের দাম কম থাকার কথা। ২০২০ সালের আগস্টের শুরুর দিকে করোনাকালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে এবং প্রতি আউন্স (৩১.১০৩ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এটিই ইতিহাসের সর্বোচ্চ দর। বিশ্ববাজারের ঊর্ধ্বমুখী ওই দরের সময়ও বাংলাদেশে স্বর্ণের ভরি ছিল ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। এর সঙ্গে গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে নতুন করে ঝুঁকিতে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। দেশে দেশে হয় মূল্যস্ফীতির রেকর্ড। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে স্বর্ণের দাম। তবে এখনও তা ২০২০ সালের দর স্পর্শ করেনি।

আবার প্রতিবেশী ভারতের দি ইকোনমিক টাইমসের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে প্রতি ভরি স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৭৮৫ রুপি, যা টাকায় ৮৬ হাজার ৮৩৬ ছিল।