হুমকির মুখে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ AM , আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ AM
![আশুগঞ্জ](https://bangladeshmoments.com/resources/img/article/202412/Untitled_design_20241222_085054_0000-12258.jpg)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইজারার শর্ত ভঙ্গ, মেঘনা নদী ও তীরবর্তীস্থান ভরাট করে দখলে নিয়ে চলছে জেটি পরিচালনার কাজ। যেখানে বড় জাহাজে করে আনা মালামাল খালাসের পর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের পানি নিঃসরণ পাইপের ওপর দিয়ে চলাচল করছে ভারী যানবাহন। এতে হুমকির মুখে (এপিএসসিএল) এর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট। ইতিমধ্যে গত ১ ডিসেম্বর জেটিটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বৃহত্তর এই কেপিআই প্রতিষ্ঠানটি। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে দ্রুত ঘাটটি অপসারণে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরজমিন ঘুরে এবং বিআইডব্লিউটিএ ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি. এর বিভিন্ন অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুন ‘আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড চ্যানেল-১ শুল্ক আদায়’ কেন্দ্র এলাকা ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ইজারা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। ইজারা পান আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান। ইজারার শর্তানুযায়ী অবকাঠামোগত পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়া কেবল নদীর পাড় ব্যবহার করে যাত্রী ও মালামাল উঠা-নামার কথা।
কিন্তু ইজারাদার সেই শর্তভঙ্গ করে মেঘানা নদী ও তীরবর্তীস্থানের বিশাল জায়গা ইট-বালু দিয়ে ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করেছে। যেখানে প্রতিদিন জাহাজে করে আনা ধান-চালসহ বিভিন্ন মালামাল ক্রেন দিয়ে খালাসের পর ভারী যানবাহন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এসব ভারী যানবাহন চলাচল করছে আশুগঞ্জ পওয়ার স্টেশন কোম্পানী লি. এর বিদ্যুৎ ইউনিটের পানি নিঃসরণ পাইপের ওপর দিয়ে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বৃহত্তর এই কেপিআই প্রতিষ্ঠানের দুটি বিদ্যুৎ ইউনিটের উৎপাদন। সম্প্রতি এর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে জেটিটি অন্যত্র স্থানান্তরে জেলা প্রশাসককে লিখিত অনুরোধ করে আশুগঞ্জ পওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি.।
এতে উল্লেখ করা হয়, মাটির সড়কের নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন (ইস্ট প্লান্টের) ওয়াটার ইনটেক পাইপের ওয়াটার পাইপ, ফায়ার এবং সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, ড্রিংকিং ওয়াটার পাইপ ও ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইউনিটের ওয়াটার আউটফল পাইপ রয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্লান্ট দুটি দীর্ঘ মেয়াদীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে সঙ্গে ধূলাবালির কারণে এয়ার ফিল্টার জ্যাম হয়ে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল কমে যাবার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এতে প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যবস্থায়।
এদিকে ইজারা দেয়া ঘাট মালামাল লোড/ আনলোডের জন্য অনুমোদিত স্থান না হওয়ায় গত ১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গা ঘেঁষে মেঘনার তীরভূমিতে নৌযান ভিড়ানোসহ মালামাল উঠা-নামা বন্ধ করে জাহাজসহ ভারী মালামাল সরিয়ে নিতে ইজারাদারকে নির্দেশ দেয় বিআইডব্লিউটিএ।
মেঘনা নদী ও তীরবর্তী স্থান ভরাট করে জেটি নির্মাণ করায় নদীর পানি প্রবাহ ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কার কথা জানান নদী ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সংগঠন তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ। তিনি জানান, নদী ও নদীর প্লাবন ভূমি দখলে নিয়ে এই জেটি করা হয়েছে। এখানে বিআইডব্লিউটিএ’ র অবহেলা রয়েছে। তারা যদি আর্থিক সুবিধা না পেয়ে থাকে তাহলে তাদের নাকের ডগায় কিভাবেনদী দখল হচ্ছে।
আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দর বিআইডব্লিউটি এর উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান জানান, আশুগঞ্জ চ্যানেল ওয়ানের পাশে বিদ্যমান যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থায় ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছিল। ইজারাদর প্রভাব খাটিয়ে এখানে ভরাট করে ঘাট করেছে। তিনি ইজারা শর্ত ভঙ্গ করায় তাকে ঘাটটি অপসারণের জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি থানায়ও ঘাটটি অপসারণ ও কার্যক্রম বন্ধা করার জন্য জানিয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম জানান, খবর পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কেপিআই প্রতিষ্ঠানে এমন ঘাট থাকতে পারে না। দ্রুত এটাকে অপসারণ করা হবে।
ইাজারাদার মো. শাহজাহান জানান, এই ঘাটটি অনেক আগে থেকেই ছিলো। আমাদের খালগুলো দিয়ে নৌকা চলাচল করতে না পারায় এসব ঘাট দিয়েই ধান, চাল,গমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উঠা-নামা করা হয়। এজন্য বিআইডব্লিউটি এই স্থানটিকে বন্দোবস্ত দিয়ে থাকে। এর আগে অনেকেই বন্দোবস্ত পেয়েছে। তবে এবার আমার নামে বন্দোবস্থ হয়েছে। মূলত বিআইডব্লিউটি এ কর্মরতরা আমাদের কাছে উৎকোচ চেয়েছিল। উৎকোচ না দেয়াতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কেপিআই প্রতিষ্ঠানের কোন ক্ষতি হউক তা আমরা কখনো চাই না।