যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা: যেভাবে যাবেন

উচ্চশিক্ষা
  © ফাইল ছবি

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য সবার পছন্দের প্রথম সারিতে থাকে। কিন্তু কীভাবে এই দেশে সহজে যাওয়া সম্ভব? কেনইবা এই দেশকে শিক্ষার্থীরা প্রথম পছন্দে রাখবেন? এরকম নানা জিজ্ঞাসা প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মনে। এসব বিষয় নিয়ে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর সাথে কথা বলেছেন আলবাট্রস এডুকেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বাংলাদেশ স্টুডেন্স এসোসিয়েশন অব ইউকে-এর সাবেক সভাপতি মো. মেহেদী হাসান।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: সম্প্রতি আমরা দেখেছি কানাডা ও ইউএসএ-তে প্রচুর ভিসা আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ইউকে-তে এটা কিরকম?

মেহেদী হাসান: আমি যদি অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করি তাহলে এই দেশে ভিসা বাতিলের হার এক থেকে দুই শতাংশ হবে। আমাদের গত ছয় মাসের রিপোর্টে দেখা যায় অন্যান্য দেশে প্রায় ৭০ পার্সেন্ট ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন স্টুডেন্টদেরও ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে। সে তুলনায় ইউকে এখনও পর্যন্ত অনেক বেটার অপশন। এমনকি এখনো পর্যন্ত যেসব স্টুডেন্টের ইউএসএ ও কানাডাতে ভিসা রিজেক্ট হচ্ছে তারা ইমিডিয়েটলি ইউকেতে ভিসা প্রসেস করে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: ইউকেতে টিউশন ফি কেমন?

মেহেদী হাসান: ইউকেতে টিউশন ফি শুরু হয় ৯ হাজার ৭৫০ পাউন্ড আর সর্বোচ্চ ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত আছে। কিন্তু সাধারণত ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ডের মধ্যেই থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যেটা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মতো (১ পাউন্ড= ১৩৯ টাকা ধরে)।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: ইউকেতে যেসব শিক্ষার্থী পড়তে যাচ্ছেন তাদের টিউশন ফি ও লিভিং খরচ বহন করার পরে টিকে থাকা কতটা সহজ?

মেহেদী হাসান: যাদের লক্ষ্য এখানে লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক, গবেষক অর্থাৎ একাডেমিশিয়ান হবে তাদের জন্য ইউকে একটা বেস্ট অপশন হতে পারে। আর যারা চায় যে শুধু মাস্টার্স শেষ করে নিজের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করবে কিংবা দেশে ফিরে যাবে অথবা অন্য কোন দেশে গিয়ে চাকরি বা ব্যবসা করবে তাদের জন্যও ইউকে বেস্ট অপশন হতে পারে। কারণ যেহেতু ইউএসএ ও কানাডাতে ভিসা রিজেক্টের হার অনেক বেশি সেজন্য আমি মনে করি তাদের ভিসায় নেগেটিভ স্টাম্প না লাগিয়ে এখানেই তিন বছরে অনার্স বা এক বছরে মাস্টার্স শেষ করে ইউরোপের অন্যান্য দেশে খুব সহজেই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে অথবা অন্য কোন অপশন হাতে নিয়ে যেতে পারে। অথবা সে ইউকেতে সেটেল্ড হতে পারে। 

ইউকেতে যেসব ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ আছে ওই রিলেটেড পড়ালেখা যদি ঠিকমতো করতে পারে তাহলে কিন্তু খুব সহজেই সে সেটেল্ড হতে পারে।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: আইএলটিস এ কম স্কোর বা আইএলটিস ছাড়াই পড়তে যাওয়ার সুযোগ আছে কি না?

মেহেদী হাসান: অবশ্যই, প্রায় চার থেকে পাঁচটি ইউনিভার্সিটি আছে যেখানে আইইএলটিএস ছাড়াই পড়তে পারে। এর মধ্যে বেস্ট হচ্ছে রেক্সাম ইউনিভার্সিটি, যারা বাংলাদেশের প্রায় ৭০টি ইউনিভার্সিটি থেকে এমওআই একসেপ্ট করে। পাঁচ বছর আগে যারা গ্রাজুয়েট করেছে, কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি রয়েছে যারা দশ বছর আগে গ্রাজুয়েট করেছে তাদেরকে আইইএলটিএস ছাড়াই মাস্টার্স করার জন্য সুযোগ দেয়। আর একটা বেস্ট নিউজ হচ্ছে যারা আন্ডারগ্রেডে গোল্ডেন অথবা এ প্লাস পেয়েছে তারা ইউকে এর কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে আইইএলটিএস ছাড়া অনার্স করতে পারবে। লো স্কোর ৪ নিয়েও অনেকে সরাসরি অনার্স করার জন্য আসতে পারতেছে।

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাজ্যের রেক্সহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুন আইইএলটিএস ছাড়াই

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: যারা যাচ্ছে তারা কত সহজে সেখানে চাকরি পাবে?

মেহেদী হাসান: এই বিষয়ে যদি বলি তাহলে দেখেন বাংলাদেশে ২০০ শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট হচ্ছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে ২০ জন, বাকিরা পাচ্ছে না। এর মানে এই না যে যারা চাকরি পাচ্ছে তারা ভালো, বাকিরা খারাপ। এখানে এমনও শিক্ষার্থী আছে যে টিউশন ফি থেকে শুরু করে তার খাওয়া-দাওয়া সব কিছু নিজে ম্যানেজ করতেছে। আবার এমনও আছে যে, তার পুরো টিউশন ফি সে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসছে। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। কেউ যদি তার চোখ-কান খোলা রাখে বা এখানে যেসব টেকনিক আছে সেগুলো ফলো করে, তাহলে তার থাকা-খাওয়া, চলা-ফেরাসহ সকল খরচ খুব সহজেই ম্যানেজ করতে পারে। কিন্তু তার আয় থেকে যদি টিউশন ফি পুরোটাই দিতে হয় তাহলে এটা খুব কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে কেউ যদি ইউএসএ ও কানাডাতে অনার্স করে সেখানে কিন্তু চার বছর টিউশন ফি দিতে হয়। আর ইউকেতে সেটা তিন বছর। এতে করে অনেক কম খরচ হয়।

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যদি রেজাল্ট ভালো থাকে তাহলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত স্কলারশিপের ব্যবস্থা থাকে। আর এটা শুধু প্রথম বর্ষের স্টুডেন্টদের জন্য। কিন্তু কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে শুধু ফার্স্ট সেমিস্টার ফুল স্কলারশিপ দিয়ে আর স্কলারশিপ দেয় না। ইউকেতে আবার প্রোগ্রেস স্কলারশিপ রয়েছে। প্রথম বর্ষের রেজাল্ট যদি ভালো হয় তাহলে দ্বিতীয় বর্ষে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত স্কলারশিপ দেয়। তৃতীয় বর্ষেও একই নিয়ম। এখানে অনার্স কিংবা মাস্টার্স শেষ করার পরে একজন স্টুডেন্ট দুই বছর পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা পাচ্ছে; যে সময় সে ফুল টাইম কাজ করতে পারবে।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে ?

মেহেদী হাসান: এখানে সরকারিভাবে যে স্কলারশিপগুলো দেয়া হয় সেগুলো ফুল স্কলারশিপ হয়। কিন্তু জেনারেল স্টুডেন্টদের কথা যদি বলি তাদের ক্ষেত্রে ফুল স্কলারশিপ হয় না, পার্শিয়াল স্কলারশিপ হয়। সেক্ষেত্রে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ১ হাজার থেকে ৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত স্কলারশিপ দেয়া হয়। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ৭ হাজার পর্যন্ত দেয়। এটা নির্ভর করে ইউনিভার্সিটি টু ইউনিভার্সিটি এবং কোর্স টু কোর্সের উপর। তবে ধরে নিতে পারেন একজন জেনারেল স্টুডেন্টের জন্য মাস্টার্সে ১০ থেকে ১২ হাজার পাউন্ডের মতো দেয়া হয়।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: সবচেয়ে কম টিউশন ফি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে? 

মেহেদী হাসান: বর্তমানে সবচেয়ে কম টিউশন ফি রয়েছে রেক্সাম ইউনিভার্সিটিতে। এখানে অনার্সের টিউশন ফি ৯ হাজার ৭৫০ পাউন্ড এবং মাস্টার্সের ১০ হাজার ৫০০ পাউন্ড। কিন্তু যদি কারো আইইএলটিএস-এ ৬.৫ স্কোর থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে মাত্র ১০ হাজার পাউন্ড। এছাড়া চেস্টার ইউনিভার্সিটিতে টিউশন ফি কম।

বাংলাদেশ থেকে যারা মেডিকেলের স্টুডেন্ট অথবা যারা ডাক্তারি কোর্সগুলো করতে চায়, ডাক্তারি শেষ করে অথবা এই বিষয়ে সবচেয়ে কম খরচ ও কোয়ালিটি সম্পন্ন শিক্ষা পেতে চায়, তাদের জন্য বেস্ট ইউনিভার্সিটি হতে পারে এই চেস্টার ইউনিভার্সিটি। এখানে টিউশন ফি মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার পাউন্ড।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: লন্ডনের ভেতর ও বাইরে খরচ কেমন?

মেহেদী হাসান: আমাদের বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের ভেতর একটি ধারণা আছে যে লন্ডনেই থাকতে হবে; বাঙালি কমিউনিটির সাথে থাকতে হবে। সেখানে হালাল খাবার পাওয়া যাবে, কাজ পাওয়া যাবে। এটা একটা ভুল ধারণা। লন্ডনের ভেতর একটি রুম নিয়ে যদি থাকেন তাহলে কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৮০০ পাউন্ড দিতে হবে। অন্যান্য খরচসহ এতে করে আপনার মাসিক খরচ করতে হবে ১ হাজার থেকে ১২০০ পাউন্ড। তাহলে আপনাকে বেঁচে থাকার জন্য কম করে হলেও ১২০০ পাউন্ড আয় করতে হবে। কিন্তু লন্ডনের বাইরে আপনি ৬০০ থেকে ৭০০ পাউন্ডের মধ্যে লিভিং কস্ট চালাতে পারবেন।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: একজন শিক্ষার্থী স্থায়ী আবাসিকতা (পিআর) কীভাবে পাবে?

মেহেদী হাসান: পিআরের জন্য আন্ডারগ্রেডের অথবা মাস্টার্স কমপ্লিট করার পরে যে কোন কোম্পানির আন্ডারে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। কোন কোম্পানি যদি আপনাকে স্পন্সর করে তাহলে এখানে ৫ বছর কাজ করার পরে আপনি পিআর পাবেন। পিআর পাওয়ার এক বছর পরে আপনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বিশেষ করে আমি বাংলাদেশে একাডেমিসিয়ান ও বিজনেস অনুষদের স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলবো- ইউকেতে এই মুহূর্তে এতো পরিমাণ পিএইচডি, গবেষক ও টিচারের অভাব, বিশেষ করে বিজনেস অনুষদের; আপনি যদি এখানে পিএইচডি শেষ করেন তাহলে শেষ করার আগেই বা শেষ করার সাথে সাথে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেসমেন্ট পেয়ে যাবেন। এইটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: স্পাউস ভিসায় খরচ কেমন?

মেহেদী হাসান: স্পাউস ভিসায় আসলে অতিরিক্ত কোন খরচ নেই। এখানে শুধু স্পাউসের ভিসা আবেদন ফি এবং হেলথ চার্জ দিতে হবে।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: ফুল ফান্ড স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব কি না?

মেহেদী হাসান: এটি আসলে খুবই কঠিন। দেশের টপ ইউনিভার্সিটির টপ রেজাল্টধারীদের মধ্যে হয়তো এক দুই হাজারে কয়েকজনকে এই স্কলারশিপ দেয়া হয়।

দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস: ধন্যবাদ আপনাকে।

মেহেদী হাসান: আপনাকেও ধন্যবাদ। বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর জন্য শুভকামনা।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতার কাছে থেকে আরও পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেতে  এই ফর্মটি  পূরণ করুন।  

 


মন্তব্য