নজরদারিতে বলিউড, ছাড়পত্র নিতে হবে ‘ধর্ম সেন্সর বোর্ডের’

বলিউড
বলিউডের উপর নজরদারি করবে ‘ধর্ম সেন্সর বোর্ড’  © ফাইল ছবি

ধর্মাচারণ ও হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত দিতে পারে এমন সিনেমা, সিরিয়াল, ওটিটি-র উপর কড়া নজরদারি বাড়াতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন উত্তরপ্রদেশের চর্চিত হিন্দু ধর্মগুরু জগৎগুরু শঙ্করাচার্য। তাঁর উদ্যোগে গঠিত হলো ধর্ম সেন্সর বোর্ড’।

এই বোর্ডের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বহাল হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তরুণ রাঠি। এবার থেকে কোনও সিনেমা, ওটিটি বা টিভি সিরিয়াল, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ সহ অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যে মুক্তি পাওয়ার আগে এই বেসরকারি সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেবে। 

এই বিশেষ সেন্সর বোর্ডের কাজ হল মুক্তিপ্রাপ্ত সব সিনেমা, ওটিটি এবং টিভি সিরিয়াল পূঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখা এবং তাতে হিন্দুধর্মের ভাবধারায় কোনো ভাবে আঘাত করছে কিনা তা দেখা। যদি আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়, তবে বোর্ড তাতে নিষেধাজ্ঞা ঝোলাতে পারে, এমনকী নির্দেশ না মানলে বলপূর্বক তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে স্বামী শঙ্করাচার্যের ‘ধর্ম সেন্সর বোর্ড’।

‘হঠাৎ এই বোর্ডের প্রয়োজন পড়লো কেনো?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তরুণ রাঠি বলেন, “সস্তা জনপ্রিয়তা ও যৌনতার মোড়কে পণ্য করা হচ্ছে হিন্দু আস্থা ও বিশ্বাসকে। সরকারি সেন্সর বোর্ড যথাযথ তার কর্তব্যপালনে ব্যর্থ। আর তাই এই সমান্তরাল সেন্সর বোর্ডের পরিকল্পনা৷ এমন কোনও দৃশ্য যা সতত হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করে, তা আমরা কোনও মতেই বরদাস্ত করব না।” রাঠি এও জানান, “এই সেন্সর বোর্ড একদিক থেকে চলচ্চিত্র শিল্পকে সাহায্যই করবে। কেননা, কয়েক শ’ কোটি টাকা খরচ করে কেউ কোনো সিনেমা বানালেন, তারপরে দেখা গেল হিন্দু সমাজ সেটাকে বয়কট করছে। তখন তো প্রযোজকেরই ক্ষতি। সেই ক্ষতি এড়ানোর জন্যই বোর্ডের সাথে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে।”

শুধু যে বলিউড সিনেমা বা হিন্দি সিরিয়ালের ওপরে নজরদারি চালাবে এই সেন্সর বোর্ড তা নয়। আঞ্চলিক ভাষাগুলোতে যেসব সিনেমা, সিরিয়াল, নাটক, বই এমনকি সামাজিক মাধ্যমে বা স্কুলের কোনো নাটকের ওপরেও নজর রাখবে এই 'সেন্সর বোর্ড।'

সম্প্রতি শাহরুখ-দীপিকা অভিনীত 'পাঠান' সিনেমার এক দৃশ্য নিয়ে বিতর্কের জেরের মধ্যে গঠিত হলো এই বোর্ড। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বলছে ওই ছবির একটি দৃশ্যে দীপিকা পাডুকোন গেরুয়া রঙের বিকিনি পরে গান করেছেন, যেটা হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে। ওই ছবির বেশ কিছু দৃশ্য না বদলালে সেটিকে মুক্তি পেতে দেয়া হবে না এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে।

অবশ্য বলিউড হিন্দু বিরোধী বলে অভিযোগ করে আসছে একটি মহল। সাম্প্রতিক 'পাঠান'; এর আগে 'আদিপুরুষ' নামে একটি ফিল্ম নিয়েও হিন্দুত্ববাদীরা আপত্তি তুলেছিল। তারও আগে 'কালী', 'পদ্মাবত', 'ব্রহ্মাস্ত্র', 'লক্ষ্মী' ‘পিকে’র মতো একাধিক সিনেমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা কোথাও সিনেমা হলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, কোথাও ছবির নির্মানের সময়েই সেটে হামলা হয়েছে। হিন্দু সাধু সন্তদের সর্বোচ্চ সংগঠন অখিল ভারতীয় সন্ত সমাজ সাম্প্রতি তাদের এক বৈঠকে সরাসরিই বলেছিল যে বলিউড আসলে হিন্দু বিরোধী।


মন্তব্য