বক্স অফিসে প্রোপাগাণ্ডা সিনেমা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র জয়জয়কার

দ্য কেরালা স্টোরি
  © সংগৃৃহীত

ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবি নিয়ে চলছে বিতর্ক। ফলে ধারণা করা হয়েছিল বিতর্কের কারণে প্রভাব পড়বে ছবিটির বক্স অফিস আয়ে। তবে ছবিটি মুক্তির পর দেখা গেল অন্য চিত্র।

মুক্তির প্রথম দিনে ছবিটির আয় দাঁড়িয়েছে ৮.০৩ কোটি রুপি। শনিবার (৬ মে) ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ টুইট করে জানান, ছবিটির প্রথম দিনের আয় সম্পর্কে। তিনি তার পোস্টে ছবিকে বাহবা জানিয়ে বলেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠাল। একেবারে ছয়! এটির দুর্দান্ত শুরু হল’।

মুক্তির প্রথম দিনেই যেন ইন্ডাস্ট্রিকে চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিল এই ছবি। ফলে এই সপ্তাহের শেষে (শনিবার এবং রবিবার) যে ছবিটা তুমুল ব্যবসা করবে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। শুধু তাই নয় ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া আয়ের দিক থেকে সেরা ৫ ছবির মধ্যে পঞ্চম স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছে ছবিটি।

এছাড়াও ন্যাশনাল চেইনে এই ছবি ৪ কোটি টাকা আয় করেছে প্রথম দিনেই। একই সঙ্গে দর্শকদের থেকেও ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়ে এই ছবির শোয়ের সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৫ মে) হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম ভাষায় মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন আদা শর্মা, যোগিতা বিহানি, সোনিয়া বালানি, সিদ্ধি ইদনানি, বিজয় কৃষ্ণ, প্রণয় পাচৌরি, প্রণব মিশ্র প্রমুখ।

উল্লেখ্য, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দল সিপিআইএম বলছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আসলে ধর্মান্তরকরণ, লাভ জিহাদ ইত্যাদি নিয়ে আরএসএস যে মিথ্যা ভাষ্য প্রচার করে, এই সিনেমায় সেটাকেই দেখানো হয়েছে। 

সিনেমাটিকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

সিনেমার পরিচালক সুদীপ্ত সেন একটা ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ৩২ হাজার নারীর এই সংখ্যাটা তিনি পেয়েছেন কেরালার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডির বিধানসভায় পেশ করা এক তথ্য থেকে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, প্রতি বছর কেরালায় ২৮০০ থকে ৩২০০ নারী ইসলামে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। তাই দশ বছরে সংখ্যাটা ৩২ হাজার হবে, এমনটাই হিসাব দিয়েছিলেন সিনেমাটির পরিচালক।

“উমেন চান্ডি হিসাব দিয়েছিলেন ধর্মান্তরিত নারীদের, তিনি তো আর বলেন নি যে ধর্মান্তরিত সব নারী মৌলবাদী হয়ে গিয়ে ইসলামিক স্টেটে চলে যাচ্ছেন। তাই সুদীপ্ত সেন যেটাকে সত্য কাহিনী বলে বর্ণনা করছেন, তার কোনও ভিত্তিই নেই," বলেন মি. আলবুহারি।

আলিম আলবুহারি বলেন, ২০১৭ সালে লোকসভায় এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষেন রেড্ডি বলেছিলেন, জাতীয় সন্ত্রাস দমন এজেন্সি এবং রাজ্যস্তরের এজেন্সিগুলি ইসলামিক স্টেট সদস্য বা তাদের মদতদাতা হিসাবে ১০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ওই তথ্যে মন্ত্রী রাজ্যওয়ারি হিসাবও দিয়েছিলেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কেরালা থেকে মাত্র ১৪ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মি. ।

সুদীপ্ত সেনের ওই সাক্ষাতকার প্রচারিত হওয়ার পরে ভারতের ভুয়া খবর চিহ্নিত করার পোর্টাল ‘অল্ট নিউজ’ খুঁজে বের করেছিল যে কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ২০১২ সালে বিধানসভায় বলেছিলেন যে ২০০৬ সাল থেকে ২৬৬৭ জন নারী ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।

তবে কেরালা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে গতবছর জানিয়েছিলেন, তাদের হিসাবে ১০ থেকে ১৫ জন নারী ২০১৬ সাল থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছিলেন। আফগানিস্তানে তালিবান ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে সেখানকার জেলে চারজন কেরালার নারী বন্দী আছেন, যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছিলেন আগে।

মি. অরভিন্দাকশানের আইনজীবী বলছেন, “যদি এই সিনেমায় কাল্পনিক গল্প কথাটি উল্লেখ করা হতো, তাও মানা যেত। কিন্তু এখানে তো সত্য ঘটনা, যা এতদিন অজানা ছিল, ইত্যাদি শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিনেমাটিকে কী করে কেন্দ্রীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিল?”

সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য মঙ্গলবারই এই সিনেমাটির মুক্তি পাওয়ার ওপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে দায়ের করা একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে। আবার জামিয়াত উলেমা এ হিন্দও মামলা করেছে একই আর্জি জানিয়ে।

এদিকে সিনেমাটির পক্ষ নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘কংগ্রেস পার্টি আসলে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিতে চাইছে। সেই কারণে এই ছবিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। তাতে তারা আদতে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে।’’

এই ছবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটি সমাজের অন্দরে বাসা বেঁধে থাকা সন্ত্রাসবাদের মুখোশকে প্রকাশ্যে আনবে। কেরালার মতো একটা সুন্দর জায়গা, যেখানকার লোকজন এত বুদ্ধিমান, মেধাবী, সেখানে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদ সমাজের চূড়ান্ত ক্ষতি করছে। আর কংগ্রেস পার্টি এমনই একটা ছবিকে নিষিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে! এরা শুধু উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে সব কিছু নিষিদ্ধ করতে জানে। এই দলটার আমার জয় বজরংবলী বলাতেও সমস্যা রয়েছে।’’


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ