‘সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে আরএসএস’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ মুভি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী

দ্য কেরালা স্টোরি
ইনসেটে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী  © সংগৃহীত

ভারতে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন 'দ্য কেরালা স্টোরি' ছবির প্রযোজকদের সমালোচনা করে বলেছেন, এই ফিল্মের মাধ্যমে তারা 'লাভ জিহাদ' ইস্যু তুলে ধরে রাজ্যকে ধর্মীয় উগ্রবাদের কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করতে সংঘ পরিবারের এজেন্ডা প্রচার করছে।

গতকাল রবিবার সিপিএম নেতা বিজয়ন বলেন, 'লাভ জিহাদের' বিষয়টি আদালত, তদন্তকারী সংস্থা এমনকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খারিজ করেছে। তিনি বলেন, হিন্দি ছবির ট্রেলারটিতে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে 'ইচ্ছাকৃতভাবে' তৈরি করা হয়েছে।  

মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেন, ‘চলচ্চিত্রের ট্রেলারে আমরা দেখেছি কেরালায় ৩২ হাজার নারীকে ধর্মান্তরিত করে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য করা হয়েছে। এই ভুয়া কাহিনী সঙ্ঘ পরিবারের মিথ্যার কারখানার ফসল।’  তিনি বলেন, ‘এটি মিথ্যা এবং সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো ও রাজ্যে মানুষকে বিভক্ত করার লাইসেন্স নয়।’

বিজয়ন মালয়লিদের এ জাতীয় চলচ্চিত্র প্রত্যাখ্যান এবং মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে সমাজে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সামনে কেরালাকে হেয় করতেই মূলত ছবির মাধ্যমে এই প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। বিজয়ন একটি বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের প্রচারমূলক চলচ্চিত্র এবং এতে দেখানো মুসলমানদের বিচ্ছিন্নতাকে অবশ্যই কেরালায় রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য সঙ্ঘ পরিবারের (আরএসএস/রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ) প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।

তিনি সঙ্ঘ পরিবারকে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ বপন করে’ রাজ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করার অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু সঙ্ঘ পরিবারের বিভাজনমূলক রাজনীতি কেরালায় কাজ করছে না, তাই ‘ভুয়া গল্প’ অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই ছবিটি কোনও তথ্য বা প্রমাণের উপর ভিত্তি করে তৈরি নয়।

'দ্য কেরালা স্টোরি' পরিচালনা করেছেন বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন। এর চিত্রনাট্যও লিখেছেন সুদীপ্ত। আগামী ৫ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বিতর্কিত ওই ছবি। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে কেরালার প্রায় কথিত ৩২ হাজার নারীকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, তাদের উগ্রপন্থি করা হয়েছে এবং তারপর তাদের ভারতসহ সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী মিশন চালানোর জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।

কংগ্রেস নেতা ভিডি সাথীসান বলেন, 'এই ছবি জুড়ে রয়েছে মিথ্যাচার। ছবির  টিজারে দেখানো হয়েছে, কেরালা থেকে ৩২ হাজার মহিলাকে ধর্মান্তরিত করে তাদের সিরিয়া ও আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা পুরোপুরিভাবে আমাদের রাজ্য ও একটি ধর্মের মানুষের অপমান, আর এর পিছনে রয়েছে সঙ্ঘীদের হাত।’  

তিনি আরও বলেন, ‘এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইস্যু নয়, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর সন্দেহের ছায়া ফেলে সমাজে বিভাজন তৈরি করার জন্য সংঘ পরিবারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার অংশ।’ রাজ্য সরকারের কাছে এই ছবির স্ক্রিনিং রুখে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কংগ্রেস বলেছে, এটি একটি প্রোপাগ্যান্ডা ছবি। এই ছবির মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নির্মাতারা। 

আগামী ৫ মে হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু এবং মালায়ালি ভাষায় মুক্তি পাবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। তার আগেই ওই ইস্যুতে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র: পার্স টুডে


মন্তব্য