চাকরি না পেয়ে চায়ের দোকান দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ দুই বন্ধু

চাওয়ালা
বি.টেক চাওয়ালা  © সংগৃহীত

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মিলছিল না চাকরি। উপার্জনের অন্য উপায় না পেয়ে চায়ের দোকান দিলেন দুই তরুণ। আলমগীর খান ও রাহুল আলি দুজনই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন।  ‘বি.‌টেক চাওয়ালা’ নামে একটা চায়ের দোকান দিয়ে আলোচনায় আসেন তারা। ব্যাতীক্রমধর্মী উদ্যোগের এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মালদহে।

গত রবিবার বছরের প্রথম দিনে নিজেদের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পিছনে রেখে পথ চলার বাস্তবতাকে সামনে নিয়েই খুলে ফেললেন চায়ের দোকান। মালদহের ইংরেজবাজার শহরের স্টেশন রোডে কানি মোড়ের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চায়ের দোকান খুলেছেন তাঁরা। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। তাঁদের এই কাহিনী এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

উত্তর ২৪ পরগনার হাওড়া স্টেশনের ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’, পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ‘এমএ চাওয়ালার’ পর এবার ‘বি.‌ টেক চাওয়ালা’ চালু হলো।

এর উদ্যোক্তা আলমগীর কালিয়াচকের থানা রোড ও রাহুল ইংরেজবাজার শহরের রেল কলোনির বাসিন্দা। দুজনেই মালদহে গণি  খানের নামাঙ্কিত কারিগরি কলেজের ছাত্র ছিলেন।

আলমগীর ২০১৭ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স করেন। ওই বছরই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স করেন রাহুল। তিনি আর পড়াশোনা না করলেও আলমগীর কলকাতার একটি বেসরকারি কারিগরি কলেজ (স্বামী বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজি) থেকে ২০২১ সালে বি টেক পাস করেন।

আলমগীরের বাবা শাহেনশা খান ঢালাই মেশিন (ছাদ ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত) ভাড়া দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আলমগীর তার বড় ছেলে। রাহুলের বাবা মনসুর আলি পেশায় ট্যাক্সি চালক।

এ সম্পর্কে আলমগীরের বাবা শাহেনশা বলেন, ছেলেকে অনেক টাকা খরচ করে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলে এখন চায়ের দোকান খোলায় অনেকের কথা শুনতে হবে ঠিকই। তবে বাড়িতে বসে থাকার থেকে চায়ের দোকান করা অনেক ভালো।

দোকানের নাম এমন কেন? জানতে চাইলে তারা জানালেন, “কলেজ জীবনে চায়ের দোকানে প্রচুর সময় কাটিয়েছি। আজ ভাগ্যের করুণ পরিণতিতে নিজেদেরই চায়ের দোকান দিতে হয়েছে।” তবে কোনও কাজই যে ছোট না তা বোঝাতেই চায়ের দোকানের এমন নামকরণ তাও তাঁরা জানিয়েছেন। এদিকে দুই হবু ইঞ্জিনিয়ারকে চায়ের দোকান খুলতে দেখে অনেকেই তাঁদের আগামী জীবনের শুভকামনা জানানোর পাশাপাশি সমাজের করুণ বেকারত্বের চিত্রকে ফের একবার তুলে ধরেছেন।

মালদা পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ স্নেহাশিস গুহ বলেন, অন্য-রাজ্যেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের চাহিদা মতো বেতন মিলছে না। এ রাজ্যেও তারা তেমন সুযোগ পাচ্ছে না। দুঃখ হয়। আশা করছি, আগামী দিনে চিত্র বদলাবে। চায়ের দোকান দেওয়া ছাত্রদের জন্য শুভ কামনা রইল।

তাদের এই দোকানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর গৌতম দাস। তিনি বলেন, চায়ের দোকানের পাশাপাশি, আলমগীর ও রাহুল চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তাদের উদ্যোগকে প্রশংসা করতে হয়।