গোহত্যা বন্ধ হলে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে: ভারতীয় আদালত

গো-হত্যা
  © সংগৃহীত

গোহত্যা বন্ধ হলেই পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের গুজরাট আদালতের বিচারক সমীর বিনোদচন্দ্র ব্যাস। 

গরু পাচারের এক মামলায় এক যুবককে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দিতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। গরু নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যের তাপি জেলা আদালতের বিচারকের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে ভারতজুড়ে।

তিনি দাবি করেছেন, গোবর দিয়ে তৈরি বাড়ি পারমাণবিক বিকিরণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।” গোমূত্র বহু রোগের উপশম করে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই বিচারক।

তিনি বলেন, "বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে গোবর দিয়ে তৈরি ঘরগুলি পারমাণবিক বিকিরণ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। গৌমূত্র [গোমূত্র] ব্যবহার অনেক দুরারোগ্য রোগের নিরাময়"। তাঁর দাবি, গরু থেকে জন্ম নেয় ধর্ম।

গরু, গোমূত্রের মাহাত্ম্য নিয়ে অতীতে বিজেপির একাধিক নেতার মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল দেশটিতে। করোনা মহামারীর সময়ও গোমূত্রের উপকারিতা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। বলেছিলেন, “দেশি গরুর মূত্র করোনা আক্রান্তদের ফুসফুসের সংক্রমণ হওয়া থেকে বাঁচায়। আমার অনেক শারীরিক সমস্যা আছে। আমি প্রতিদিন গোমূত্র পান করি।”

যদিও পরে তিনি নিজেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন। করোনাকে হারানোর ওষুধ হিসেবে গোমূত্র পানের কথা বলে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র সিংও। ‘গরুর দুধে সোনা রয়েছে’ বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

এবার গুজরাটের আদালতের বিচারক যেভাবে গোমূত্রের মহিমার কথা বললেন, তা নতুন মাত্রা যোগ করল এ সংক্রান্ত বিতর্কে।

ওই বিচারক এও বলেছেন, “গরুকে যদি অখুশি রাখা হয়, তাহলে সম্পত্তি গায়েব হয়ে যায়।”

তার কথায়, “গরু কোনও প্রাণী নয়, গরু হল মা। ৬৮ কোটি পবিত্র স্থান ও ৩৩ কোটি দেবতার জীবিত গ্রহ হল গরু।”

আদালতে বিভিন্ন শ্লোকের উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "গরুকে অসুখী রাখলে আমাদের সম্পদ ও সম্পত্তি অদৃশ্য হয়ে যায়"।

বিচারক গোহত্যাকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আদালতে তিনি বলেন, "আজ যে সমস্যাগুলি আছে তা হল উত্তেজনা এবং উত্তপ্ত মেজাজের বৃদ্ধির কারণে। আর এই মেজাজ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হল গরু জবাই করা। এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বন্ধ হবে না।"

১৬টিরও বেশি গরু পাচারের অভিযোগে গত বছর আগস্টে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলায় ওই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার পাশাপাশি ৫ লাখ রুপি জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে এই মামলায় গরু নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ সবার নজর কেড়েছে।