মোদিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র বন্ধের বিরুদ্ধে মামলা শুনবেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

মোদী
ইন্ডিয়া দ্য মোদি কোশ্চেন  © সংগৃহীত

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা জনস্বার্থ মামলা শুনতে রাজি হয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

আগামী সোমবার এ-সংক্রান্ত মামলাগুলো শুনতে রাজি হয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি পি এস নরসিংহ ও বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা।

বিষয়টি দ্রুত শোনার জন্য আজ এই বেঞ্চে অনুরোধ জানান মামলা দায়ের করা দুই আইনজীবী এম এল শর্মা ও সি ইউ সিং। তাঁদের এই অনুরোধ মেনে আদালত ঠিক করেন, তাঁরা আগামী সোমবার বিষয়টি শুনবেন।

তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আরও কয়েকজন মামলা করেছেন। তাঁরা হলেন প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র।

বিভিন্ন আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তথ্য–প্রযুক্তি আইনের বিধি অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, সাংবাদিক এন রাম ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশটি জনসমক্ষে জারি করেনি।

আইনজীবী সি ইউ সিংয়ের আবেদনে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্রটি দেখানোর অভিযোগে কলেজছাত্রদের বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।

আইনজীবী শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বৈরতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ মৌলিক অধিকার হরণ করছে।

জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করা হয়েছে, তাঁরা দুই পর্বের তথ্যচিত্রটি দেখুক। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যাঁরা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নিক।

যুক্তরাজ্য সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ শিরোনামের দুই পর্বের তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে। তথ্যচিত্রটি তারা ভারতে প্রদর্শন করেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে না ছড়ায়, সে জন্য তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করে ইউটিউব ও টুইটারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ভারত। সে অনুযায়ী, ৫০টির বেশি টুইট মুছে ফেলা হয়, যাতে তথ্যচিত্রটির লিংক দেওয়া হয়েছিল।

তথ্যচিত্রের প্রতিপাদ্য হলো, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার মূল হোতা ছিলেন রাজ্যটির তখনকার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিবিসির মতে, এই দাঙ্গাই পরবর্তী সময় মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিবিসির তথ্যচিত্রটি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখানো হচ্ছে। এ নিয়ে অশান্তি অব্যাহত রয়েছে।

কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি তথ্যচিত্রটিকে অসত্য, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অমর্যাদাকর ও ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ বলে অভিহিত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তথ্যচিত্রটি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গত রবিবার লন্ডনে বিবিসি কার্যালয়ের সামনে প্রবাসী ভারতীয়দের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, মোদির নেতৃত্বে ভারতের অগ্রগতি ঠেকানোর একটি চক্রান্ত এ তথ্যচিত্র। একই দিন হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন দিল্লিতে বিবিসি অফিসের বাইরে ঔপনিবেশিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্টার সেঁটে দেয়।

প্রথম আলো থেকে


মন্তব্য