ভূমধ্যসাগরে ভাসছে ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী, সাহায্যে এগোচ্ছে না কেউ

নৌকা
  © সংগৃহীত

প্রায় ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিয়ে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ইতালি ও মাল্টার মধ্যবর্তী ভূমধ্যসাগরে ভাসছে একটি নৌকা। সাহায্য সংস্থা অ্যালার্ম ফোন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যেকোনো সময় ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে নৌকাটি। এর আশপাশে দুটি জাহাজ থাকলেও সেগুলোকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় বিপদে পড়া মানুষদের সহায়তা করে অ্যালার্ম ফোন। বেসরকারি সংস্থাটি রোববার (৯ এপ্রিল) টুইটারে জানায়, লিবিয়ার তবরুক থেকে রওয়ানা হওয়া একটি নৌকা থেকে রাতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান ঘোষণা করা হয়নি।

অ্যালার্ম ফোন বলছে, নৌকায় থাকা মানুষেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন। নৌকায় জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে এবং নিচতলায় পানি উঠে গেছে। মাঝি চলে যাওয়ায় সেটি এখন নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ নেই।

নৌকাটি এখন মাল্টা ও ইতালির মধ্যকার ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এরিয়া’ এসএআর-এ রয়েছে। দুর্গতদের জীবন বিপন্ন থাকায় সাহায্য পাঠাতে বিলম্ব না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকাটি খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মান সংস্থা সি-ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল৷ তারা জানায়, নৌকাটির আশপাশে দুটি জাহাজ রয়েছে। তবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার না করতে ওই দুই জাহাজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু একটি জাহাজকে জ্বালানি দিয়ে নৌকাটিকে সহায়তা করতে বলেছে মাল্টা।

সংস্থাটি বলেছে, নৌকার ৪০০ আরোহী মৃত্যুমুখে রয়েছে। তাদের বাঁচাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সি-ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল সোমবার সিএনএন’কে জানিয়েছে, রাতের বেলা আবহাওয়া ‘খুব খারাপ’ হয়ে গিয়েছিল। দেড় মিটার (পাঁচ ফুট) পর্যন্ত ঢেউ হচ্ছিল। এনজিওটির এক মুখপাত্র বলেছেন, আরোহীর সংখ্যা ও বর্তমান আবহাওয়ার কারণে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

মুখপাত্র আরও বলেন, মাল্টার উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্রকে অবিলম্বে অভিযান শুরু করতে হবে। কিন্তু পরিবর্তে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে কেবল পেট্রোল সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন নৌকাটি নিজেই ইতালির দিকে যেতে পারে, যা খুবই বিপজ্জনক।

ইতালীয় কোস্ট গার্ড বলেছে, তাদের কাছে নৌকাটি সম্পর্কে দেওয়ার মতো কোনও তথ্য নেই। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সিসিলিয়ান দ্বীপ ল্যাম্পেদুসায় হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে তারা। 

প্রতি বছর যুদ্ধ, নির্যাতন ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে এবং আরও ভালো অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সন্ধানে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে অনেকেই ছোট ছোট নৌকায় মাঝসমুদ্রে আটকা পড়েন। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা নিয়ে এ অঞ্চলের ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সবশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ১৩১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩৬৮ জন।

গত মার্চ মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে অন্তত ২৮ অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রাণ হারান।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৮৭৫ জন এই বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা করেছেন। এদের বেশিরভাগই আইভরি কোস্ট, গিনি, বাংলাদেশ, তিউনিসিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিক।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে, সিএনএন


মন্তব্য