চাঞ্চল্যকর আতিক ও আশরাফ হত্যা

আতিক ও আশরাফকে হাটিয়ে হাসপাতালে কেন নেওয়া হচ্ছিল, প্রশ্ন আদালতের

ভারত
আতিক ও আশরাফকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়  © সংগৃৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশ পুলিশের হেফাজতে নিহত ‘বাহুবলী’ খ্যাত রাজনীতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য আতিক আহমেদ ও আশরাফ আহমেদের হত্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গুরুতর প্রশ্ন তুললেন। কেন তাঁদের হাঁটিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা জানতে চেয়েছেন। উত্তর প্রদেশ সরকারকে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ ও তাঁর এক সঙ্গীও সম্প্রতি পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন। সে বিষয়েও রাজ্য সরকারকে যাবতীয় তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট ও বিচারপতি দীপংকর দত্ত আজ শুক্রবার এই নির্দেশ দেন। তিন সপ্তাহ পর এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

জনস্বার্থে এই মামলা করেছেন আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি। আহমেদ ভাইয়ের হত্যা ছাড়াও উত্তর প্রদেশ পুলিশের হাতে ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় ‘এনকাউন্টারে’ মোট ১৮৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশে অপরাধ দমনের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকাশ দুবে হত্যার পর বিচারপতি বি এস চৌহানের নেতৃত্বে গঠিত বিচারবিভাগীয় কমিশনের সুপারিশ রাজ্য সরকার পালন করছে না। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তা জানাতেও নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজ্য সরকারের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী মুকুল রোহতগি সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ‘আতিক ও আশরাফ আহমেদ এবং তাঁদের পরিবার ৩০ বছর ধরে বহু অসামাজিক কাজ করে চলেছেন। হতে পারে তাঁদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কেউ এই অপরাধ ঘটিয়েছেন। আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’

বিচারপতি ভাট ও দত্ত জানতে চান, অপরাধীরা কী করে জানল যে, ওই দিন ওই সময় আহমেদ ভাইদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে? জবাবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী বলেন, সুপ্রিম কোর্টেরই নির্দেশ আছে হেফাজতে থাকা অপরাধীদের দুই দিন অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সে জন্যই তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল।

বিচারপতি দত্ত পাল্টা জানতে চান, কেন তাঁদের প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল? কেন তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়নি?

উত্তরে মুকুল রোহতগি বলেন, হাঁটার দূরত্ব বেশি ছিল না। তা ছাড়া হত্যাকারীরা সাংবাদিক সেজে ছিল। সবাই দেখেছেন, কীভাবে তারা খুন করেছে। অকুস্থলে ৫০ জনের বেশি লোক ছিলেন। হত্যাকারীরা সেই সুযোগ নিয়েছে।

রোহতগি বলেন, রাজ্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। বিশেষ তদন্তকারী দলও গড়েছে। রাজ্য সরকারকে সব তথ্য নতুন হলফনামায় দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, তা দেখে তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।

আবেদনকারী আইনজীবী তিওয়ারি এজলাসে বলেন, রাজ্য সরকারই অভিযুক্ত। তদন্তের নির্দেশ তারাই দিচ্ছে। তা ছাড়া কমিশন শুধু এই হত্যাকাণ্ড খতিয়ে দেখবে। অথচ আবেদনে সব ‘এনকাউন্টারে’ হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। প্রতিটি ‘এনকাউন্টারে’ হত্যার মধ্যে একটি প্যাটার্ন রয়েছে।

বিচারপতি ভাট আইনজীবী তিওয়ারিকে জানান, রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন কমিশন বৃহত্তর বিষয়গুলো বিচারের আওতায় নেবে কি না।

গত ১৩ এপ্রিল পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’ মৃত্যু হয় আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ ও তাঁর এক সঙ্গীর। দুই দিন পর ১৫ মে রাতে প্রয়াগরাজে (সাবেক নাম এলাহাবাদ) পুলিশি হেফাজতে তিন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন আতিক ও আশরাফ আহমেদ।

আতিক ও আশরাফকে হত্যাকারী তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রশ্ন হলো এই তিন যুবক আতিক ও আশরাফকে কী কারণে হত্যা করেছে? যুবক তিনজন প্রাথমিকভাবে পুলিশকে বলেছে ক্রাইম দুনিয়ায় নাম লেখানোর জন্য তারা হত্যা করেছে। ছোটখাট হত্যা করলে নাম হতো না, এজন্য আতিক ও আশরাফকে হত্যা করেছে।

তিন যুবকের একজনের নাম লাভলেশ তিওয়ারি, দ্বিতীয় মোহিত (সানি) এবং তৃতীয়জনের নাম আরুণ মওরিয়া।

পুলিশ এখনো ইনভেস্টিগেশন করছে। তিনজন আলাদা আলাদা শহরে থাকে এবং তিনজনই একে অপরের সঙ্গে পূর্বে কখনও সাক্ষাৎ করেনি। যদিও সানি আর লাভলেশ দুজনে ২০২১ সালে বান্দা জেলে সাক্ষাৎ হয় একবার, কিন্তু এরপর আর কখনও তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাহলে এর এই হত্যাকাণ্ডের জন্য একসঙ্গে কীভাবে আসলো?

দ্বিতীয়ত, এরা খুবই গরিব ছিল, কাপড় পর্যন্ত ছেঁড়া। তাহলে তাদের কাছে ‘জিগানা’ তার্কিশ পিস্তল যা আমেরিকান কোস্টগার্ড ও ফিলিপাইনের পুলিশ ব্যবহার করে, যার দাম ৬-৭ লাখ রূপি, এটা ওদের কাছে আসলো কীভাবে?

এক ফেক ক্যামেরা এবং মাইক কেনার জন্য টাকা কোথা থেকে আসলো? এছাড়া এরা কীভাবে জানলো যে সময় পরিবর্তন করে আতিককে মেডিকেল চেকআপরে জন্য এক্জ্যাক্ট রাত সাড়ে দশটার সময় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবে? এরা প্রথমে দিল্লিতে এক হয়, এরপর প্ল্যানিং করে, তারপর প্রয়াগরাজে আসে, সো হোটেলের খরচপাতি তাদের কাছে কীভাবে আসলো? এছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।

এর আগে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়, এছাড়া তাদের বাড়িঘরও বুলডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়।

আহমেদ ভাইদের হত্যার পর বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, রাজ্যে মাফিয়া রাজ শেষ। এখন আর কোনো মাফিয়া ফোন করে কাউকে হুমকি দিতে পারবে না। উত্তর প্রদেশে দাঙ্গা বন্ধ। মানুষ শান্তিতে রয়েছেন। নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারেন। এই রাজ্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেরা।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ