সৌদি-ইয়েমেন শান্তি প্রক্রিয়াকে মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা: প্রবল চাপে রিয়াদ

সোৗদি-ইয়েমেন
সৌদি-ইয়েমেন শান্তি আলোচনা  © দ্য ক্রেডল

সৌদি আরব ও ইয়েমেন যখন যুদ্ধ অবসানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ঠিক তখন রিয়াদের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাপের কারণেই এতদিন যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধি দল শান্তি আলোচনার জন্য এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ইয়েমেনের রাজধানী সানা সফর করে। ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল সৌদি প্রতিনিধি দলের প্রথম ইয়েমেন সফর। সৌদি প্রতিনিধি দল এমন সময় ইয়েমেন সফরে যায় যখন এর আগে তারা আনসারুল্লাহ ও ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের সাথে কথা বলতেও প্রস্তুত ছিলেন না। সৌদি কর্মকর্তাদের সানা সফরের অর্থ হচ্ছে ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ সমর্থিত সালভেশন সরকারকে তারা কার্যত মেনে নিয়েছে।   

সৌদি প্রতিনিধি দলের সানা  সফরের একই সময়ে ওমানের প্রতিনিধি দলও শান্তি আলোচনার জন্য সানা সফর করেন। এসব সফর থেকে যুদ্ধ অবসানে  সব পক্ষের আন্তরিকতা ফুটে উঠে। বিশেষ করে ওমানের মধ্যস্থতার প্রতি সৌদি আরব ও ইয়েমেন  উভয়েরই আস্থা রয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিরিন আল আদিমি তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, 'ইয়েমেনের মেহেদি আল-মাশাত এবং সৌদি আরবের মুহাম্মদ আল-জাবেরের মধ্যে হ্যান্ডশেক ছিল ইয়েমেন সংকটের টার্নিং পয়েন্ট। কেননা এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা ইয়েমেন যুদ্ধ ও সৌদি অবরোধের নাটকীয় পরিবর্তনের সূচনা করবে যে যুদ্ধ ও অবরোধে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৭৫ হাজারের বেশি ইয়েমেনি নিহত হয়েছে এবং আরো লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়ে খাদ্যের অভাবে চরম ক্ষুধা ও মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে'।

যাইহোক, এতো ক্ষয়ক্ষতির পরও শেষ পর্যন্ত ইয়েমেন ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্দীবিনিময় চুক্তি হয়ে তা বাস্তবায়নও হয়েছে। কিন্তু এখনকার ঘটনাবলী থেকে দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ অবসানের জন্য চূড়ান্ত কোনো সমঝোতায় এখনো তারা উপনীত হতে পারেনি। চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ বন্ধে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। এমনিতেই ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় আমেরিকা ভীষণ অসন্তুষ্ট। কেননা তেহরান-রিয়াদ সম্পর্ককে ওয়াশিংটন নিজের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে। এ অবস্থায় ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদি আরবের সুসম্পর্ককে আমেরিকা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেনা এবং সম্পর্ক যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য আমেরিকা প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে রিয়াদের ওপর। 

শান্তি প্রক্রিয়া ঠিক মতো এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের রাজনৈতিক শাখার সদস্য আলী আল কাহুম বলেছেন, 'এটাকে বাস্তব রূপ দিতে হলে সৌদি আরবকে অবশ্যই আমেরিকার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও অবরোধ অব্যাহত রাখার জন্য পাশ্চাত্য যে চাপ সৃষ্টি করছে তা থেকে সৌদি আরবকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা পাশ্চাত্যের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সৌদি আরবকে ইয়েমেনের চোরাবালিতে আটকে ফেলা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সৌদি আরবের গণ্ডগোল বাধিয়ে রাখা যাতে সমগ্র এ অঞ্চলে আমেরিকা তার মোড়লিপনা বা কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে'।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল বাখাইতিও আল মায়াদিন টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, 'আমেরিকা ও ব্রিটেন ইয়েমেনে শান্তি চায় না। যখনই তারা দেখতে পায় শান্তি আলোচনা এগিয়ে গেছে তখনই তারা তাতে বাধা দেয় এবং সামরিক পন্থার দিকে উৎসাহিত করতে  থাকে'।

প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা চায় ইয়েমেন শান্তি আলোচনায় ওয়াশিংটনকেও রাখা হোক। কিংবা তারা এটা চায় না যে যুদ্ধ অবসানে চীন অথবা ইরানের কোনো ভূমিকা থাকুক। আমেরিকা মনে করে ইয়েমেন যুদ্ধের অবসান মানেই এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং ইসরাইলে স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। এসব দিক বিবেচনা করে আমেরিকা ইয়েমেনের সাথে শান্তি আলোচনা বন্ধ করার জন্য সৌদি আরবের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি  করেছে। সূত্র: পার্স টুডে


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ