রুশ সেনাবাহিনীর কাছে বাখমুত হস্তান্তর, চলে যাচ্ছে ওয়াগনার

রাশিয়া
বাখমুতে তার যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ছবি : রয়টার্স  © সংগৃহীত

রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছিলেন বাখমুতের দখল সম্পন্ন করে ১ জুনের মধ্যে তিনি শহরের নিয়ন্ত্রণ রুশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু তার সপ্তাহখানেক আগেই এখন তিনি বলছেন, তার যোদ্ধারা বাখমুত থেকে চলে যেতে শুরু করেছে এবং তাদের ঘাঁটিগুলো রুশ সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

পরোক্ষভাবে প্রিগোজিন বলতে চাইছেন, বাখমুত এখন পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে এবং তার কাজ আপাতত শেষ। তবে তিনি বলেছেন, রুশ সেনারা যদি বাখমুত ধরে রাখতে অপারগ হয় বা বড় কোনো বিপদে পড়ে, ওয়াগনারের যোদ্ধারা ফিরে আসবে।

অন্যদিকে ইউক্রেন দাবি করছে, তাদের সেনারা এখনো বাখমুতের বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই ছিল এখন পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াই। দুই পক্ষের হাজার হাজার যোদ্ধা সেখানে প্রাণ হারিয়েছে। বাখমুতে রাশিয়ার পক্ষে প্রধানত লড়াই করেছে ওয়াগনার।

এ সপ্তাহেই বাহিনীর প্রধান বলেন, তার ২০ হাজার যোদ্ধা বাখমুতে প্রাণ হারিয়েছে।

বিধ্বস্ত শহরটিতে দাঁড়িয়ে আজই (বৃহস্পতিবার) টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় প্রিগোজিন বলেন, ‘আমরা আজ বাখমুত থেকে আমাদের ইউনিটগুলো প্রত্যাহার করছি।’ বিবিসি যাচাই করে দেখেছে যে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বাখমুত শহরের পূর্বে একটি ওষুধের দোকানের কাছ থেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, প্রিগোজিন, যিনি শনিবার ঘোষণা দেন যে ইউক্রেনের কাছ থেকে বাখমুত এখন পুরোপুরি তাদের দখলে, তার যোদ্ধাদের বলছেন, অবশিষ্ট গোলাবারুদ রুশ সেনাদের জন্য তারা রেখে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অল্প কিছু ওয়াগনার যোদ্ধা সেনাদের সাহায্যে কাছাকাছি কোথাও থেকে যাবে।
তিনি বলেন, ‘যখন সেনারা কোনো কঠিন সমস্যায় পড়বে, তারা (ওয়াগনার যোদ্ধারা) রুখে দাঁড়াবে।’ সে সময় শোনা যায়, তিনি তার যোদ্ধাদের সতর্ক করছেন, তারা যেন রুশ সেনাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে।

সম্প্রতি ওয়াগনার নেতা বাখমুতে তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা না করার জন্য একাধিকবার রুশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। গত মাসে তিনি এমন হুমকিও দিয়েছিলেন, তাকে প্রয়োজনীয় গোলা সরবরাহ না করলে তিনি তার যোদ্ধাদের বাখমুত থেকে প্রত্যাহার করবেন।

ওয়াগনার শনিবার বাখমুতে বিজয় ঘোষণা করলেও ইউক্রেন এখনো স্বীকার করছে না যে শহরের পতন হয়েছে। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী হানা মালিয়ার আজ (বৃহস্পতিবার) বলেন, বাখমুতের উত্তর-পশ্চিমের লিটাক মহল্লার অংশবিশেষ এখনো তাদের সেনাদের দখলে। টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শত্রুরা শহরতলি এলাকাগুলোতে ওয়াগনার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করে নিয়মিত সেনাদের মোতায়েন করছে, কিন্তু মূল শহরের ভেতর এখনো ওয়াগনার অবস্থান করছে।’

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়ার কাছে বাখমুতের সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব তেমন নেই, কিন্তু শহরটি নিয়ে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে জেতার একটি প্রতীকী মূল্য রয়েছে। বাখমুতের যুদ্ধের রাশিয়ার পক্ষে মূলত লড়াই করেছে ওয়াগনার এবং প্রিগোজিন ইউক্রেন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে উঠেছেন। তিনি ওয়াগানারের পক্ষে লড়াই করার শর্তে রাশিয়ার বিভিন্ন কারাগার থেকে হাজার হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাড়িয়ে এনে স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে রণাঙ্গনে মোতায়েন করেন। এ সপ্তাহেই তিনি বলেন, যে ২০ হাজার ওয়াগনার যোদ্ধা বাখমুতে মারা গেছে তারা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল।

এ মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তাদের বিশ্বাস বাখমুত যুদ্ধে ২০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৮০ হাজার। এসব পরিসংখ্যান অবশ্য নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি।

বাখমুত দখলের রুশ দাবি সঠিক হলে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের সামরিক কৌশল অর্জনের আরো কাছাকাছি চলে যাবে। কারণ এই শহরটি দখলে আনতে পারলে পুরো দনেৎস্ক অঞ্চল তাদের আয়ত্তে চলে যাবে।

বাখমুতে লড়াই শুরু হওয়ার সময় সেখানে ৭০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। লবণ, জিপসাম এবং ভালো মদ উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ এই শহরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এবং মাত্র কয়েক হাজার মানুষ সেখানে অবশিষ্ট রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ