কাজের খোঁজে দেশ ছাড়ছেন লাখো পাকিস্তানি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ০৬:০৩ PM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ০৬:০৩ PM

কাজের খোঁজে পাকিস্তানের হাজারো শিক্ষিত তরুণ এবং শিক্ষিত শ্রমিকরা দেশ ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে প্রায় দুই লাখ পাকিস্তানি কাজের জন্য দেশ ছেড়েছেন। এছাড়া আরও হাজার হাজার তরুণ দেশ ছাড়ার জন্য ভিসা আবেদন করছেন।
এমনই এক তরুণ হলেন মুহাম্মদ হামজা। সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। সুযোগ পেলেই আমি বিদেশে চলে যাবো। সেখানে ভবিষ্যৎ গড়বো।
অপর এক তরুণ মুসাফির। তিনি বলেন, পাকিস্তানে চাকরির বাজার খুবই সীমিত। আসলে পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক।
গত বছর আট লাখের বেশি পাকিস্তানি চাকরির খোঁজে দেশ ছেড়েছে বলে জানায় দেশটির অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক ব্যুরো।
কোভিড মহামারীর আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬২৫,৮৭৬। তার আগের বছর পাকিস্তান ছেড়েছিল আরও কম; ৩৮২,৪৩৯ জন। হামজা ও মুসাফিরের মতো অনেকে শিক্ষা ও অন্যান্য কারণে পাকিস্তান ছাড়ছেন। তারা আর দেশে ফিরে আসেন না।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিশেষ উদ্যোগবিষয়ক মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষিত তরুণদের এভাবে দলে দলে দেশ ছেড়ে যাওয়া খুবই উদ্বেগের বিষয়। তরুণদের দেশেই যথাযথ কাজের পরিবেশ দিয়ে তাদের দেশ ছাড়া রোধ করাটা আমাদের দায়িত্ব।’ এ জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতে মেধাবী তরুণদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা কমবে বলেই আশা করছে সরকার।’
এ বছর পাকিস্তানের জন্য ধীর প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেই সেঙ্গে দেশে বেকারের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়া পাকিস্তানে গত বছরের বিপর্যয়কর বন্যা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির দরপতন হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়ে সংকট সামলানোর চেষ্টা করছে তারা। এ পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানকে আরও ভোগাতে পারে বলে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা।
এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়ে সংকট সামলানোর চেষ্টা করছে তারা। এ পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানকে আরও ভোগাতে পারে বলে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট শুরুর আগেও দেশটির অনেক শ্রমিক বিদেশে চলে যেতেন। কম আয় ও জীবনযাত্রামানের উন্নতির সুযোগ কম থাকায় তাদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে দেশ ছাড়তেন।
গত বছর জুনে গ্যালাপ পাকিস্তান ও গিলানি ফাউন্ডেশনের যৌথ জরিপে দেখা গেছে, ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন পাকিস্তানির একজন বিদেশে গিয়ে চাকরি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা তরুণদের মধ্যে এ হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গ্যালাপ পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক বিলাল গিলানি।
পাকিস্তানি এক তরুণ বলেন, তাদের প্রজন্ম তাদের মা–বাবাদের সময়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। এক দশক আগেও পাকিস্তানে তাদের মা–বাবারা বাড়ি কিনতে পারতেন, বিনিয়োগ করতে পারতেন, সম্পদও অর্জন করতে পারতেন।