মোদিকে নিয়ে মন্তব্য
বিজেপির তোপের মুখে বারাক ওবামা ও সাংবাদিক সাবরিনা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ০৫:২৩ PM , আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ০৫:২৩ PM

ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ মুসলিমদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবার ন্যাক্কারজনকভাবে ক্ষমতাসীন বিজেপির তোপের মুখে পড়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি।
ওয়াশিংটনে মোদির ‘ঐতিহাসিক’ সফর চলাকালে বারাক ওবামার ‘পরামর্শ’ সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ঠিকভাবে নিতে পারেননি, সেই সঙ্গে হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকির প্রশ্নও যে তাকে অখুশি করেছিল, ক্রমে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মোদি জুতসই জবাব দিতে না পারলেও তার ক্ষমতাসীন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ মুখ্যমন্ত্রীরা চড়াও হয়ে ওঠেন ওবামা ও সাবরিনার ওপর। কেউ কেউ বারাক ওবামাকে মুসলিম তকমা লাগিয়ে ‘হুসেন ওবামা’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় করার অপচেষ্টা করছেন।
আবার সাবরিনাকে পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত উল্লেখ করে তাকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা, ভারতবিরোধী হিসেবে দেখাতেও কার্পণ্য করছেন না। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ওয়ার, ডেইলি মেইল।
সেই সঙ্গে দেশটির শাসক দল ও বিজেপি সরকারের পক্ষে শুরু হয়েছে সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে ওবামার ‘হুসেন’ সত্তা এবং দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকির ‘পাকিস্তানি মুসলমান’ পরিচয়। বরাবরের মতোই বিজেপি নেতাকর্মীদের এমন প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি মৌনতা বজায় রেখেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সংবাদ সংস্থা সিএনএনে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বরাক ওবামা ভারতে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ প্রসঙ্গে সোজাসাপটা জানিয়ে দেন যে মোদির সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উচিত মুসলমানদের নিরাপত্তা, সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়নের বিষয়টি তার সামনে তুলে ধরা। ওবামা আরও বলেন, তার নিজের সঙ্গে মোদির কথা হলে তিনি অবশ্যই মোদিকে সতর্ক করে বলতেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ না দেখলে আর এমন বৈষম্য অব্যাহত থাকলে একটা সময় গোটা ভারত ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। যাতে 'হিন্দু ভারতেরও' মঙ্গল হবে না।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের প্রথা অনুযায়ী প্রশ্নোত্তর পর্বে মার্কিন সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি সংখ্যালঘু নির্যাতন ও বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে মোদিকে প্রশ্ন করেছিলেন।
এরপর থেকে ওবামা ও সাবরিনা দুজনকেই হিন্দুত্ববাদীর তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। যখন মনে করা হচ্ছিল ওই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে বিজেপি বা মোদি সরকারের কোনো ভূমিকা নেই, তখনই বিজেপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বুঝিয়ে দিলেন, দল ও সরকারও এ বিষয়ে এক।
গত রবিবার বারাক ওবামার নাম উল্লেখ না করে নির্মলা বলেন, যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ৬টি মুসলমান দেশে ২৬ হাজার বোমা ফেলেছিল, বৈষম্য ও মুসলিম নিপীড়ন নিয়ে তার অভিযোগ মূল্যহীন ও বাহুল্যতা।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া বিজেপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বিষোদ্গার সম্ভব কি?
প্রশ্নটি ইতিমধ্যেই চর্চায় উঠে এসেছে। বোঝা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই সাবেক প্রেসিডেন্টের ওই সমালোচনা খোলামনে নিতে পারেননি। মন্ত্রীকে দিয়ে এই অভিব্যক্তির প্রকাশ বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ।
ওবামাকে প্রথম আক্রমণ করেছিলেন বিজেপি-শাসিত আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ওবামার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর ভারতীয় সাংবাদিক রোহিণী সিং টুইট করে জানতে চেয়েছিলেন, ‘অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গুয়াহাটিতে ওবামার বিরুদ্ধে কি কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে? ওবামাকে কোনো ফ্লাইট থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করতে আসাম পুলিশ কি ওয়াশিংটন যাচ্ছে?’
এই টুইট করারও এক প্রেক্ষাপট আছে। গুজরাটের কংগ্রেস বিধায়ক জিঘ্নেশ মেঘানির বিরুদ্ধে হিন্দু অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য আসামে কয়েকটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে আসাম পুলিশ গুজরাটে যায়। গ্রেপ্তার করে আসামেও নিয়ে আসে।
একই অভিযোগে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরাকে দিল্লি বিমানবন্দরে বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করেছিল আসাম পুলিশ। পবন খেরা বেঁচেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে। মেঘানি ছাড়া পেয়েছিলেন বেশ কিছু দিন ভোগান্তির পর। রোহিণী সিং এ কারণেই জানতে চেয়েছিলেন, ওবামাকে ধরতে আসাম পুলিশ ওয়াশিংটন যাবে কি না।
সেই টুইট ও তার জবাবে সময় নষ্ট না করে ২৩ জুন হিমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করে বলেন, ‘ভারতে বহু হুসেন ওবামা রয়েছে। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে তাদের ব্যবস্থা করাই প্রথম কাজ। আসাম পুলিশ সেই অগ্রাধিকারকেই গুরুত্ব দেবে।’
বারাক ওবামাকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সচেতনভাবেই ‘হুসেন ওবামা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্টের ‘মুসলমানত্বের’ ওপর জোর দিয়েছেন। কংগ্রেসসহ বিরোধীরা তা নিয়ে সরব হয়েছেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাকে ‘মাই ফ্রেন্ড বরাক’ বলে সম্বোধন করেছেন, তিনি হয়ে গেলেন ‘হুসেন’ ওবামা? বিরোধীদের অভিযোগ, ওবামার মন্তব্যে বিজেপি ক্ষিপ্ত। তাকে বিদ্ধ করে বিজেপি দেশের মুসলমানদের ‘শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে সাবরিনা সিদ্দিকিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হেয় করা হচ্ছে মোদিকে মুসলিম নির্যাতনের প্রশ্ন করায়। অনেকেই তাকে পাকিস্তানি জঙ্গী বলে গালি দিলে জবাবে সাবরিনা তার বাবার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করেন। এছাড়া ভারত-পাকিস্তানের একটি ক্রিকেট ম্যাচে ভারত জিতে গেলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার একটি ছবিও শেয়ার করেন সাবরিনা। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি মনে-প্রাণে ভারতীয়।
উল্লেখ্য, সবরিনা সিদ্দিকীর বাবা ভারতীয় এবং তার মা পাকিস্তানী নাগরিক।