রামমন্দির উদ্বোধনের মধ্যেই অযোধ্যায় নতুন মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা

মন্দির
  © সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় নবনির্মিত রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান চলছে। ঠিক সেই সময় সেখানকার মুসলমানেরা রক্তাক্ত অতীত ভুলে অযোধ্যায় নতুন মসজিদ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। কয়েক দশকের তিক্ততা ভুলে নতুন করে শুরুর আশা করছেন তাঁরা। চলতি বছরের মে মাসেই এই নতুন মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

অযোধ্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি করা রাম জন্মভূমিতে নির্মিত হয়েছে রামমন্দির। ষোলো শতকে এই ভূমিতে নির্মিত হয়েছিল বাবরি মসজিদ। ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙে ফেলে একদল উগ্র হিন্দুত্ববাদী। বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে ভারতের হিন্দু-মুসলিম আন্তঃসম্প্রদায় দাঙ্গা শুরু হয়। যা চলে কয়েক দশক। সেই দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই মুসলমান। 

পরে ২০১৯ সালে ভূমিটিতে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল বেআইনিভাবে। রায়ে আরও বলা হয়, তবে প্রাপ্ত প্রমাণ অনুসারে, এই মসজিদের নিচে একটি অ-ইসলামিক অবকাঠামো ছিল। সেই ভিত্তিতে আদালত নির্দেশ দেয়, এই জায়গাটিকে মন্দির নির্মাণের জন্য হিন্দু জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হবে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণে শহরের অন্যত্র জমি দেওয়া হবে। সেই নির্দেশের ধারাবাহিকতায় সেখানে রামমন্দির নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় বিজেপি সরকার। অবশেষে আজ সেই মন্দিরের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। 

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ তদারকির জন্য গঠিত ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) মসজিদ উন্নয়ন কমিটির প্রধান হাজি আরফাত শেখ রয়টার্সকে বলেছেন, রমজান মাসের পর মে মাসে নির্মাণকাজ শুরু হবে এবং মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হবে তিন থেকে চার বছরে। 

প্রায় ১৮ কোটি ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটিরও বেশি রুপি ব্যয়ে নির্মিত রামমন্দির থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নির্মিত হবে মসজিদটি। তবে মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে খাবি খাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়। 

আইআইসিএফ-এর সভাপতি জুফার আহমদ ফারুকী বলেন, ‘আমরা কারও কাছে যাইনি...এর (তহবিল সংগ্রহ) জন্য আমাদের কোনো জন আন্দোলন ছিল না।’ অথচ, রামমন্দির নির্মাণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ও সমমনা হিন্দু দলগুলো বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মন্দির নির্মাণের জন্য অনুদান চাইতে শুরু করে এবং ভারতের ৪ কোটি মানুষের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি রুপি (বা ৩৬০ মিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করেছে। 

আইআইসিএফ-এর সেক্রেটারি আতহার হুসেন বলেন, মিনারসহ নতুন মসজিদের কাঠামোতে অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী উপাদান যুক্ত করার চেষ্টা করায় এই মসজিদের জন্য নতুন করে নকশা করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প বিলম্বিত হয়েছিল। তিনি জানান, এই মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। 

বিজেপি নেতা ও মসজিদ উন্নয়ন কমিটির প্রধান হাজি আরফাত শেখ জানান, আগামী সপ্তাহে একটি ক্রাউড-ফান্ডিং ওয়েবসাইট চালু হবে বলে আশা করছি আমরা। নতুন এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে, ‘মসজিদ-ই-মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ’। ফলে এই নতুন মসজিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের আর কোনো সংযোগ সেই অর্থে থাকছে না। 

আন্তঃসম্প্রদায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বিষয়টি উল্লেখ করে হাজি আরফাত শেখ বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা ছিল মানুষের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাকে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসায় পরিণত করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালো জিনিস শেখাতে পারি তবে এই সব লড়াই বন্ধ হয়ে যাবে।’


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ