গাজায় পাঠানো ত্রাণ ফেলে তছনছ করছে দখলদার ইসরায়েলি বাসিন্দারা

গাজা
  © সংগৃহীত

গত ৭ মাসের অধিক সময় ধরে চলা ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা এখন ধ্বংসস্তুপ আর দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। এ অবস্থায় গাজায় মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে পাঠানো কয়েকটি ত্রাণের ট্রাক আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিক্ষোভকারীরা ত্রাণের ট্রাক থেকে খাবারের প্যাকেট রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে এবং শস্যের প্যাকেটগুলো ছিঁড়ে ফেলে।  

অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরন চেকপয়েন্টে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ত্রাণের ট্রাকগুলো জর্ডান থেকে গাজার উদ্দেশে যাচ্ছিল, যেখানে খাবারের অভাবে মানবিক বিপর্যয় চলছে। 

ত্রাণবাহী ট্রাক লুটের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। 

ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীদের দাবি, তারা গাজায় ইসরায়েলিদের জিম্মির ঘটনায় বিক্ষোভ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে বিক্ষোভকারীদের ট্রাক থেকে খাবারের বক্স মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে দেখা যায়। এগুলো মাটিতে পড়ার পর পা দিয়ে খাবার নষ্ট করতেও দেখা যায় কয়েকজনকে। 

কয়েকটি ভিডিওতে আবার ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। অবশ্য এই ভিডিওগুলোর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। 

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে টিজ্যাব নাইন নামের একটি দল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, এটি একটি উগ্র ডানপন্থি দল। তারা গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ সামগ্রি পাঠানোর বিপক্ষে। 

একজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তিনি সোমবার চেকপয়েন্টে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি এই ত্রাণ হামাসের কাছে পৌঁছানো হবে যারা আমাদের সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যর চেষ্টা করছে।’ 

হানা গিয়াত নামে ৩৩ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘জিম্মিরা সুস্থ্য ও জীবিতভাবে ফিরে না আসা পর্যন্ত গাজায় কোনো ত্রাণ যাওয়া উচিত নয়।’ 

অবশ্য এই ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে টিজ্যাব নাইন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে গ্রুপটি বলছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাদের আন্দোলনের অংশ নয়। একই সঙ্গে তারা বলছে, ‘ত্রাণ আটকে দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর ও বাস্তব একটি পদ্ধতি, যেখানে আমরা বলছি, জিম্মিদের ফেরত না আসা পর্যন্ত কোনো ত্রাণ নয়।’  

এ ঘটনায় একজন নাবালকসহ চারজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে গ্রুপটির আইনজীবীরা। 

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এ ঘটনাকে ‘মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ ঘটনায় ইসরায়েল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। 
 
গাজার মানবিক পরিস্থিতি নির্ভর করছে এই ত্রাণের ট্রাকগুলোর ওপর। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবেই একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। এর আগে জাতিসংঘ জানায়, দুর্ভিক্ষকে ইসরায়েল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। 

এদিকে দক্ষিণ গাজা, যেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানেও ইসরায়েলের রাফাহ অভিযান শুরুর পর পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পূর্ব রাফাহ সীমান্তে মিশর থেকে ত্রাণ আসার পথটি ইসরায়েল বন্ধ করে দিয়েছে। 

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণের কারেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ যথেষ্ট কঠিন। ইসরায়েল দাবি করছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিন্তু হামাস বেসামরিক নাগরিকদের ত্রাণ চুরি করছে।  

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি এই হামলায় নিহত হয়েছে, যাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি। গাজায় হামলা শুরু পর থেকে পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দখলদারদের সহিংসতা বেড়েছে। 

অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের ১৬০টি ইহুদি বসতিতে প্রায় ৭ লাখ ইসরায়েলি বসবাস করেন। অঞ্চলটিতে প্রায় ২৭ লাখ ফিলিস্তিনির বাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই ইহুদি বসতিগুলো অবৈধ। যদিও ইসরায়েলের অবস্থান এক্ষেত্রে বিপরীত। 


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ