ঈদে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে থাকছে না নিষেধাজ্ঞা

ঈদ
  © ফাইল ফটো

আসন্ন ঈদুল ফিতরে আন্তঃজেলা বা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। তাই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় দুই চাকার এই যান নিয়ে চলাচল করা যাবে। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলবে না। পদ্মা সেতু এলাকায় ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মহাসড়কে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও পরিবহন মালিক সমিতির পরামর্শে গত বছর ঈদুল আজহায় দুই চাকার এই যান চলাচলে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে গণপরিহন বাড়াতে হবে। তাহলে মোটরসাইকেলে দূরপাল্লার যাতায়াত কমবে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী গতকাল রোববার কালবেলাকে বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরে আন্তঃজেলা রুট বা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে তো কোনো বিধিনিষেধ নেই। আমরা তো এখনো এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দিইনি। চলাচলে না করিনি।

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিআরটিএ মোট রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের মধ্যে ৭০ ভাগই এখন মোটরসাইকেল। যদিও এই যানটি কোনো অবস্থাতেই গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না; কিন্তু আমাদের দেশে গণপরিবহনের স্বল্পতা থাকায় সবাই নিজেদের ইচ্ছামতো দুই চাকার এই যান ব্যবহার করছেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, সরকারের সব বিভাগে কথা বলে দেখেছি এবারের ঈদে মহাসড়কে বাইক চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। সারা দেশে দূরপাল্লার ৪০ হাজার বাসে ঈদ মৌসুমে চার লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারে। অনেক বাস একবারের বেশি যাতায়াত করতে পারে না। এক্ষেত্রে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা আরও কমে। সব মিলিয়ে ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন বাদ বাকি ১৬ লাখ মানুষ কীভাবে গ্রামে যাবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৬১ হাজার। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ঈদ মৌসুমে কমবেশি সব মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই যানটি ভাড়ায় চলে। আবার পরিবারের লোকজন নিয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতে বাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশির ভাগ মোটরসাইকেল ১২৫ সিসির নিচে হওয়ায় দুজন যাতায়াত করাই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে এই সিসির বাইকে তিনজনসহ মালপত্র পরিবহন করতে দেখা যায়।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে গণপরিবহনগুলো ১১০ ভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে; কিন্তু উন্নত দেশে এই সংখ্যা মাত্র ৩০ ভাগ। বাইক নির্ভরতা থেকে বের হতে গণপরিবহন বাড়নোর বিকল্প নেই। ঈদ মৌসুমে বাইক চললে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়বে; কিন্তু মানুষের দুর্ভোগমুক্ত যাতায়াতে বিকল্প যানের ব্যবস্থা হয়নি।

এদিকে আসন্ন ঈদে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত ২৯ মার্চ পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর আরও চার সপ্তাহের জন্য স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) করেছেন হাইকোর্ট। এই সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটি দেখে পরবর্তী আদেশ দেবেন বলে জানান আদালত।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। পরদিন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দেশের দীর্ঘতম সেতুটি। প্রথম দিন বিপুল বাইক সেতুটি দিয়ে পার হয়। এর মধ্যেই ওইদিন রাতে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এমন অবস্থায় পরদিন সেতুটি দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার।

 


মন্তব্য