প্রতারণার শিকার হয়ে নিজেই প্রতারক চক্র গড়ে তোলে নজরুল

প্রতারণা
র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার প্রতারক চক্র (ইনসেটে মূল হোতা নজরুল)  © সংগৃৃহীত

চাকরির জন্য আবেদন করে প্রতারক চক্রের মাধ্যমে ১১ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হন নজরুল ইসলাম। এরপরও একাধিকবার চাকরির চেষ্টা করে প্রতারণার শিকার হন তিনি। অর্থ খুইয়ে চাকরি না পেলেও নিজে নিজেই বনে যান ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা। ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা করে মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের মূল হোতা নজরুল ইসলামের গল্প এটি।

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎকারী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের এই মূলহোতা নজরুল ইসলাম (২৯) ও তার তিন সহযোগীকে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ থেকে  গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০। 

আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

টিকটক দর্শকদের কাছে নজরুল ইসলামের পরিচিতি এক কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে। পোশাক-আশাক বা কথাবার্তায় তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে আসলে একজন প্রতারক। টিকটক জনপ্রিয়তার আড়ালে নজরুলের মূল কাজ প্রতারণা। যাতে সর্বশান্ত হয়েছে বহু মানুষ। প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন নজরুল ইসলাম। 

ভুয়া পরিচয়ে নিজেই গড়ে তোলেন একটি প্রতারক চক্র। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন বা কাস্টমসে আটকে থাকা বিভিন্ন মালামাল ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে জনসাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা। এভাবে চক্রটি গত দুবছরে ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় চার-পাঁচ কোটি টাকা। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, দুটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কয়েক বছর আগে রাজস্ব বোর্ডে অস্থায়ী ভিত্তিতে পিয়ন ও ঝাড়ুদার পদে চারজনকে চাকরি পাইয়ে দেয় নজরুল। এরপর আরও মানুষের কাছ থেকে চাকরির দেওয়ার নাম করে প্রতারণা শুরু করে। সম্প্রতি ১৭ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।  

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীল ও স্টিকার গাড়িতে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলো নজরুল। কাস্টমসের ভূয়া আইডি কাড,হ্যান্ডকাফ,গাড়িতে ব্যবহৃত ভুয়া স্টিকার,নগদ টাকা, পাসপোর্ট, কাস্টমসের ভুয়া প্রশ্নপত্র, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামবে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম, নাসির উদ্দিন ও সৈয়দ মো. এনায়েত। কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের হোতা নজরুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা গাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। এমনকি বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নজরুল স্থানীয় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করে বিভিন্ন প্রতারককে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়। প্রথমে ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি পায়নি। ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় পুনরায় আবেদন করে প্রতারিত হয়। 

বিভিন্ন সময়ে কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং কাস্টমসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে আসার সুবাদে কাস্টমসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সে ধারণা লাভ করে। এরপর নিজেই একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। প্রতারণা করার জন্য সে নিজেকে এলাকায় ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিত। পরবর্তীতে কাস্টমসের পিওন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৪-৫ জনকে চাকরি দিয়ে বিশ্বস্ততা অর্জন করে আরো অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করে।

কমান্ডার মঈন আরো বলেন, নজরুল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতো। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সে ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে তার নামে সম্পদ গড়ে তোলে।


মন্তব্য