এমভি আবদুল্লাহ দুবাই আল হারামিয়া বন্দরে পৌঁছাবে আজ

সোমালিয়া
  © ফাইল ছবি

সোমালিয়ার নৌদস্যুদের কবল থেকে ৩২ দিন পর মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের আল হারামিয়া বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ৫৫ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই এই কার্গো জাহাজটি বাংলাদেশ সময় আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওই বন্দরে নোঙ্গর করতে পারে। জাহাজের ক্যাপ্টেন গতকাল শনিবার বিকেলে এমভি আবদুল্লাহর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের কেএসআরএম এর সহযোগী এস আর শিপিং লিমিটেডকে এ বার্তা দিয়েছেন।

বার্তায় বলা হয়েছে, জাহাজের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় জোয়ারের সময় এমভি আবদুল্লাহ দুবাইয়ের আল হারামিয়া বন্দরে ভিড়বে। বিলম্বের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট বন্দরের বার্থিং শিডিউল অনুযায়ী জাহাজজট কিংবা অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে বার্থিংয়ে ২৪ থেকে ৩২ ঘণ্টা দেরি হতে পারে। জাহাজটি ভেড়ার পর আল হারামিয়া বন্দরে চার থেকে পাঁচদিন অবস্থান করবে বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কার্গো আছে। কয়লাগুলো দুবাইয়ের আল হারামিয়া বন্দরে খালাস করা হবে। এরপর জাহাজটি আবার চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে কবে নাগাদ রওনা দেবে, সেটি বার্থিংয়ের পর নির্ধারণ হবে। জানা গেছে, সোমালিয়ার সীমানা পার হওয়ার পর জাহাজটি এখন সর্বোচ্চ ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে আল হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশে এগোচ্ছে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান নৌদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। মুক্তিপণ পরিশোধের পর ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার নৌলদস্যুরা। তারা নেমে যাওয়ার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দু’টি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নৌদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান নৌদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। মুক্তিপণ, সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তবে এবার মাত্র ৩২ দিনেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২৩ নাবিকের মধ্যে ২১ জন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজেই চট্টগ্রাম বন্দরে ফিরবেন। দুই নাবিক দুবাই বন্দরে নেমে যাবেন। তাদের সেখান থেকে বিমানে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ