মোদীর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী
  © ফাইল ফটো

দুদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে গতকাল শুক্রবার ভারতের নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। নয়াদিল্লি পৌঁছার পর গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা। আজ শনিবার হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। 

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে ১০টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতার মেয়াদ বাড়ানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাতের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। ভারতে তার রাষ্ট্রীয় সফর আমাদের ঘনিষ্ঠ ও চিরস্থায়ী সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। আমাদের বিশেষ অংশীদারত্বের আরও উন্নয়নে তার নির্দেশনার প্রশংসা করি।

এদিকে সিআইআই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এর জন্য সব প্রতিবেশী দেশকে অগ্রাধিকার দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা (ভারতীয় ব্যবসায়ীরা) বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। 

সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলতেন- ‘প্রতিবেশী সবার আগে’ এবং তিনি বাংলাদেশের সব প্রতিবেশী দেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অগ্রাধিকার দেন। বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উলেখ করে শেখ হাসিনা সিইওদের বলেন, তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া সিইওরাও জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ করতে চান। এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তারা। বিশেষ করে কৃষি, আইটি ও লজিস্টিক সেক্টরে যৌথভাবে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন সিআইআই কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। এ সময় অন্যদের মধ্যে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।  

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বৈঠকে অংশ নেন।

অন্যদিকে আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী, সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন শোবানা কামিনেনি, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত মাধব বৈদ্য, ডাবর ইন্ডিয়া লিমিটেডের সিইও মোহিত মালহোত্রা, অমৃত সিমেন্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার বাগলা, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও (এনার্জি) দীপক অমিতাভ, সাংখ্য ল্যাবসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সিওও বিশ্বকুমার কয়ারগাড্ডে, সিটিও এবং তেজস নেটওয়ার্কস লিমিটেডের (টাটা গ্রুপ কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা ড. কুমার শিবরাজন, সিআইআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মারুত সেনগুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ২৯ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর দেশটির ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। সড়কের দুই পাশে বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা এবং শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির প্ল্যাকার্ড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। 

এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ‘বিশেষ অংশীদারত্ব’ রয়েছে তা ‘গভীর ও জোরদার’ করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রী শনিবার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিস্তৃত সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। গতকাল নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এই সফর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষেরই প্রত্যাশা অনেক। কারণ সম্পর্কটি বিশেষ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। 

মুখপাত্র বলেন, যেসব আলোচনা, সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হতে যাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আগামীকাল (২২ জুন) সবাই বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে উভয়পক্ষই এই বিশেষ অংশীদারত্বকে আরও গভীর ও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটাই প্রথম দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফর বলে জানান মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। 

সফরসূচি অনুযায়ী, আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে লালগালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেওয়া হবে। এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। এরপর সেখানে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর তিনি রাজঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে পরিদর্শক বইয়েও সই করবেন তিনি। একই দিনে হায়দরাবাদ হাউসে মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে উভয় প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ বিবৃতি দেবেন। পরে হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন তারা।

বিকালে সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। এরপর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। একই দিনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে রাত ৯টায় ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে।