ঈদের ছুটিতে সিলেটে ১০ লাখ পর্যটক সমাগমের আশা

ভ্রমণ
  © বাংলাদেশ মোমেন্টস

টানা ৫ দিন ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সেইসঙ্গে ৭-৮ দিন পর্যন্ত ছুটি পেয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবীরা।  ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেট ঘুরে দেখতে এরমধ্যে ৬০ শতাংশ হোটেল অগ্রিম বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকরা। শেষ মুহূর্তে সিলেটের সবকটি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট শতভাগ বুকিং হয়ে যাবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে সিলেটে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের সঙ্গে যোগ দেবেন স্থানীয় পর্যটকরাও। এ অবস্থায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। জেলার সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। চলছে নানা রকমের প্রচার-প্রচারণা।

অন্যদিকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন এ জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি। পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট দেশের পর্যটন নগরীগুলোর মধ্যে অন্যতম। চা-বাগান, পাহাড়, টিলা, ঝরনা, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা শীতল পানির স্রোতধারা, জলার বন, নদী-হাওর সবকিছুর এক অপূর্ব মিশেল পুণ্যভূমি সিলেটে। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা, সাদাপাথরের স্বচ্ছ পানির বিছানা, নীলনদ খ্যাত লালাখালের স্বচ্ছ পানি, রাতারগুলের প্রকৃতি, বিছানাকান্দির জলধারা, পান্তুমাইয়ের ঝর্ণাধারা ও শ্রীপুরের উঁচুনিচু চা-বাগানের দিকে তাকালে যে কেউ নিমিষেই হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির এমন মায়াবি রূপের বাইরে যান্ত্রিকতার শহরে ফিরলেও চোখে পড়বে ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ।

সুরমার তীর ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা সিলেট সার্কিট হাউজও সিলেটের ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে একটি। এসব কিছুর সৌন্দর্য উপভোগ করে ফেরার পথে কিংবা শুরুতেই হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের বিষয়টিও অনেক পর্যটক ও ভক্তের কাছে সৌভাগ্যের।

সিলেটের টিলা, পাহাড়, পাথর, ঝরনা আর চা-বাগানের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছরই ঈদ কিংবা বিভিন্ন ছুটির দিনে ভিড় জমান পর্যটকেরা। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে আবহাওয়া কেমন থাকবে সেটি নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। যদিও সারাদেশে দাবদাহের মধ্যে সিলেটের অবস্থা ভিন্ন। গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনও সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারের ঈদ ও বৈশাখের ছুটিতে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরমধ্যে অনেকে পর্যটক অগ্রিম হোটেল বুকিং করে রেখেছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইতোমধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাকিগুলো ঈদের আগেই বুকিং হয়ে যাবে। আবার অনেক পর্যটক তাৎক্ষণিক এসে হোটেল বুকিং করেন।

সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারও পর্যটক সিলেটে আসবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাকি সময়ের মধ্যে সবগুলো হোটেল বুকিং হয়ে যাবে।

জাফলং জোন টুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ (ওসি) মো রতন শেখ বলেন, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক টুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, সারাবছর আমাদের জৈন্তার লালাখাল, লাল শাপলার বিল ও শ্রীপুরসহ সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকরা আসেন। এবারের ঈদে এসব পর্যটনস্পটগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। কেউ সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিলেটে এসে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকবে। ইতোমধ্যে টুরিস্ট পুলিশকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


মন্তব্য