‘বিরোধী হতে রাজি নয় স্বতন্ত্ররা’, আইন বলছে ‘সম্ভব’
- ওসমান গনি
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৪২ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৪ PM

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেলেও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দলের আসনে বসতে রাজি নন। একাধিক প্রার্থী জানান, ‘সংসদে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান। তারা তো আওয়ামী লীগই। বিরোধী দলে কীভাবে বসবেন?’
তবে, আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি সংসদে সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সরকারি দলের আসনেই বসতে চান, তাদের জন্য সেই সুযোগও আছে। তারা সরকারি দলে যোগ দিলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে না।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এমন ইচ্ছা পোষণের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য, আইনে কী আছে, জটিলতা কোথায় আছে এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেই আলোচনার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা।
সাধারণ ধারণা হল, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করবে, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল।
গত দুটি নির্বাচনের মত এবারও ভোটের ফলে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ আসনে দলনিরপেক্ষ প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে।
জানা-বোঝার চেষ্টা হচ্ছে তাদের কেউ বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে পারবেন কি না। তারা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল হতে পারবেন কি না।
আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনত এটা ‘সম্ভব’। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, তারা শপথ নেওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বসবেন।
দশম সংসদেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। সাড়ে তিন বছর পর আবার এরা দল বেঁধে আওয়ামী লীগে ফিরেও গিয়েছিলেন। এবারও যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে কাউকে নেতা নির্বাচন করেন, তাহলে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল আর বিরোধীদলীয় নেতা পাওয়ার সুযোগ আর থাকবে না বলেন মনে করেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে: ভারত
আইনজ্ঞরা জানান, সংসদে বিরোধী দল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২(১) (ট) ধারায় বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা অর্থ হল, “স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।”
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, “স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন হলেও একা একা তাদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা সংসদে থাকা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিতে পারে। যে দলের সমর্থন বেশি হবে তারাই হবে বিরোধী দল।
“আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলাদাভাবে জোট করতে পারে, তখন ওই জোটে কতজন হবে, সেই হিসেবে তারাও বিরোধী দল হতে পারে।”
আরও পড়ুন: নৌকায় চড়েও ভোটে কারচুপির অভিযোগ করলেন ইনু
উল্লেখ্য, রোববারের ভোটে ২২২ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগের সরকারে থাকা নিশ্চিত হয়েছে। তবে বিরোধী দলে কারা বসবে– সেই প্রশ্নকে বড় করে তুলেছে জাতীয় পার্টির ১১, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৬২ আসন প্রাপ্তি। এই ৬২ জনের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। বাকিদের একজন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে, একজন বিএনপি ছেড়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতেছেন।