রোজায় পর্যটক শূন্য কক্সবাজার, হোটেল-মোটেলে বিশেষ ছাড়

কক্সবাজার
  © মোমেন্টস ফটো

অন্য সময়ের তুলনায় কক্সবাজার সৈকতে এখন চিরচেনা কোলাহল  নেই। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এখন অনেকটাই পর্যটক শূন্য। শনিবার সারা দিনে সৈকতের কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে সৈকতে মাত্র দুই হাজারের মতো পর্যটক নামতে দেখা গেছে। হোটেলমালিকেরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল ও গেস্টহাউসে প্রায় ২০ হাজারের মতো অতিথি ছিলেন। রোজার কারণে এর পর থেকে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। এখন সব কটি হোটেল–মোটেল মিলিয়ে তিন হাজারের মতো পর্যটক আছেন। পবিত্র রমজানের কারণে পুরো মাস এভাবেই কাটবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে রোজার মাসেও পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেলমালিকেরা কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় ঘোষণা করছেন। কক্সবাজারের সাতটি হোটেল ও রেস্তোরাঁমালিকদের সংগঠনের সমন্বিত মোর্চা ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, রোজার সময় অল্প কিছুসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। অনেকের কক্সবাজার ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও অতিরিক্ত খরচের কারণে বছরের অন্য সময় ভ্রমণে আসার সুযোগ হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুরো রমজানে শহরের প্রায় হোটেল-মোটেলে কক্ষভাড়ার বিপরীতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে একাধিক হোটেল-মোটেল। অর্থাৎ এক হাজার টাকার একটি কক্ষ এখন ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

গতকাল দুপুরে শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কক্ষই ফাঁকা পড়ে আছে। কোনো কোনো হোটেল পুরোপুরি ফাঁকা। আবার ছোটখাটো কয়েকটি হোটেলের মূল ফটকে তালাও ঝুলতে দেখা গেছে। এদিকে সৈকত ও শহর এলাকার অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিকেলের দিকে রেস্তোরাঁগুলোয় ইফতারসামগ্রীর পসরা বসছে।

এদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে নেমে দেখা যায়, পুরো এক কিলোমিটার সৈকতে এক শ জনের মতো পর্যটক। বেলা তিনটার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টের চিত্রও ছিল অনেকটা একই রকম। উত্তর দিকের সিগাল-লাবনী পয়েন্টের সৈকত এলাকাতেও চিরচেনা কোলাহল নেই।

ঢাকা থেকে আসা একজন পর্যটক জানান কক্সবাজার আসব আসব বলে আসা হয় না। পবিত্র রমজানে যেহেতু স্কুল বন্ধ, তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে এলাম। নির্জন সৈকত ভালো লাগছে। কিন্তু রেস্টুরেন্টসহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। তাই কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের অভিজাত তারকা হোটেল সি গাল, ওশান প্যারাডাইস, সায়মান বিচ রিসোর্ট, হোটেল লংবিচ, হোটেল কক্স টু ডে, হোটেল কল্লোল, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ আশপাশের ৫০টির বেশি হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্টে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

হোটেল সি গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, রোজার মাসে অধিকাংশ কক্ষ খালি থাকে। হোটেলে মোট কক্ষ আছে ১৭৯টি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কক্ষই এখন ফাঁকা। কক্ষভাড়ার ওপর সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, শহরে এখন তিন হাজারের মতো পযর্টক আছেন। আজ রোববার সরকারি ছুটি। আগামীকাল সোমবার থেকে পর্যটক আরও কমে যেতে পারে। তবে ঈদের ছুটির ৭ দিনে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। গত বছর ঈদের ছুটির ১০ দিনে ১২ লাখ পযটকের সমাগম ঘটেছিল।

হোটেলমালিকেরা বলেন, প্রতিবছর রোজার একমাস শহরের অনেক হোটেল-রোস্তারাঁ অঘোষিতভাবে বন্ধ থাকে। এ সময় কর্মচারীদের এক মাসের বেতন-বোনাস দিয়ে অনেকটা ছুটিতে পাঠানো হয়। কেউ কেউ হোটেল-রেস্তোরাঁতে সংস্কার ও রঙের কাজ চালান। রোজার শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের সময় হোটেল–রেস্তোরাঁগুলো পুনরায় খোলা হয়। তবে করোনা মহামারির দুই বছর হোটেল-রেস্তোরাঁমালিকেরা ব্যবসা করতে পারেননি। এরপর ব্যাংক ঋণ নিয়ে অনেকে ব্যবসা দাঁড় করালেও এখনো লাভের মুখ দেখেননি। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এবং চলতি সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত হোটেল–রেস্তোরাঁগুলো ব্যবসা ভালো হলেও রোজার মাসের মন্দার ধকল সামলাতে অনেকের হিমশিম খেতে হচ্ছে।


মন্তব্য