ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিনিময় প্রথা, পণ্যের বিনিময়ে মিলছে শুঁটকি

বিশেষ প্রতিবেদন
বিনিময় প্রথা, পণ্যের বিনিময়ে মিলছে শুঁটকি  © টিবিএম ফটো

শত বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে প্রতিবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে বসে শুঁটকি মেলা। বৈশাখ মাসে স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয় মেলার প্রচলন। এর মূল আকর্ষণ "বিনিময় প্রথা"। ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। চাল, ডাল, আম, পেঁয়াজ, রসুন, ধান, শিমের বিচি, আলু, সরিষাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিনিময়ে দেয়া হয় শুঁটকি। তবে এখন ঐতিহ্য রক্ষায় স্বল্প সময়ের জন্য মিলে পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, টাকার বিনিময়ে কেনা-বেচা হয় বেশি। সদর ইউনিয়নের কুলিকন্ডা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে মেলাটি।

প্রাচীনকালের পণ্য বিনিময় প্রথা কেমন ছিল, তার কিছুটা আঁচ মেলে ঐতিহ্যবাহী মেলাটিতে। বাংলা পঞ্জিকার নিয়মানুযায়ী, নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই মেলা বসে। স্থানীয় জেলেরা পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই ব্যতিক্রমী এ মেলা করে থাকে। একসময় বৈশাখ মাসে মাছ ধরা ও খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ধারণা করা হয়, বৈশাখ মাসেও মাছের স্বাদ পেতে আগে থেকে শুকিয়ে রাখা মাছ বা শুটকির মেলা আয়োজন শুরু হতে পারে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে গবেষণার দরকার।

প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো মেলাটি চলে আসছে কোনো আয়োজক কমিটি ছাড়াই। নিজ নিজ অবস্থান থেকে মেলা সফল করার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। একদিনে মেলায় অর্ধকোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়া এবারের মেলার আজ শেষ দিন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দোকান নিয়ে বসে আছেন। মেলায় শতাধিক রকমের শুঁটকি উঠেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। মেলায় স্থানীয় জেলেদের উৎপাদিত মিঠা পানির মাছের শুঁটকি বেশি। মাছের ডিমও বিক্রি হতে দেখা গেছে। শুঁটকি ছাড়াও বাহারি খাবার, মনিহারি মাটির খেলনা, তৈজসপত্র, কাঠের সামগ্রীর দোকানও বসান বিক্রেতারা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুই শতাধিক দোকানের প্রতিটিতে ৫-৮ লাখ টাকার শুঁটকি আছে। কিছু দোকানে আছে ২০-২৫ লাখ টাকার। ক্রেতা ভালো এলে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হবে। উপজেলার ১৯টি বিলের মাছ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শুঁটকি রয়েছে মেলায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছের শুঁটকিও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এ বছর দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ বেশি দাম দিয়ে কিনতে চায় না। সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী অমিত দাস বলেন, "আমি মেলায় এবার ২৭ লাখ টাকার শুঁটকি আনছি। তিন ঘণ্টায় মাত্র ২৬ হাজার টাকা বেচতাম পারছি। গত বছরের তুলনায় এবার দোকান বেশি। ক্রেতারা শুঁটকি কিনতে পারছেন দরদাম করে।”

উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, সম্পূর্ণ কেমিক্যাল ও বিষমুক্ত শুঁটকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঐতিহা ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজকদের পাশে থাকবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ