গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং, দিশেহারা খামারিরা

আবহাওয়া
  © সংগৃহীত

বৈরী আবহাওয়ায় কঠিন সময় পার করছে নরসিংদীসহ সারা দেশ। তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস করছে মানুষসহ সকল প্রাণিকুল। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এতে ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি মিলছে না সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তাপপ্রবাহে খামারের পশুকে দিনে তিনবার গোসল করানোসহ বেশ কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরু-ছাগল বাঁচাতে খামারিদের জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা পরামর্শ দিচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। খামারিরা গরুকে ঠান্ডা রাখার জন্য ২ থেকে ৩ বার করে গোসল করাচ্ছেন। পাশাপাশি গরু রাখার ঘরের চালে পানি ছিটাচ্ছেন যাতে করে ঘর ঠান্ডা থাকে। সেই সঙ্গে গরুকে পানির সঙ্গে মিশিয়ে গ্লুকোজও খাওয়াচ্ছেন কেউ কেউ। তা ছাড়া শুধু যে গরমের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন এমনটি নয়, দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার অনেক এলাকায় ৭ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ খামারিদের।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, জেলায় ৬টি উপজেলায় হৃষ্টপুষ্টকরণ গবাদিপশুসহ কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর ৮ হাজার ৩৮০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৭৮০টি, রায়পুরা উপজেলায় ১ হাজার ৭৩২টি, বেলাব উপজেলায় ১ হাজার ২৮৫টি, পলাশ উপজেলায় ৬৮৩টি, শিবপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৬৬টি এবং মনোহরদী উপজেলায় ২ হাজার ৬৩৪টি।

এসব খামারে ষাঁড় গুরু রয়েছে ৩২ হাজার ৫৫২টি, বলদ গরু রয়েছে ৬ হাজার ৩৩১টি, গাভি রয়েছে ৫ হাজার ৬৫২টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ৯৮৭টি, ছাগল রয়েছে ৩৫ হাজার ৪১০টি, ভেড়া রয়েছে ১৩ হাজার ৬৬৭টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৬৯টি। জেলায় মোট চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার ৯৩৬টি। বর্তমানে প্রাপ্যতা রয়েছে ৯৫ হাজার ৬৬৮টি, যা চাহিদার মিটিয়ে ১৭ হাজার ৭৩২টি উদ্ধৃত্ত রয়েছে।

জেলার শিবপুর উপজেলার মোহরপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত সালমা সুলতানা ডেইরি ফার্মের মালিক সালমা সুলতানা জানান, এই গরমে খামারে থাকা গরুর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন তিনবার গোসল করালেও গরুগুলো সর্বদা অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে। গরমে সারাক্ষণ ছটফট করছে। অপর দিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে খামারে গরুগুলোকে সময়মত গোসল করানোও যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমি একটি জেনারেটর কিনেছি। ডিজেলের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় জেনারেটরও সবসময় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আর এত গরমে গরু খুব কম খাবার খায়, আর এ কারণে গরুর ওজনও বাড়ছে না।

নরসিংদী সদর উপজেলার বীরপুর এলাকার সাইফ অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাইফ আহমেদ জানান, তার খামারে ৭০টি গরু আছে। এই গরমে গরুগুলো ঠিকমত খাবার খাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের আগেও প্রতিদিন সাড়ে তিনশত লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এখন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তা ছাড়া গরুর ওজনও কমে যাচ্ছে। চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেছে।

রায়পুরার চরাঞ্চলের চরমধুয়া গ্রামের গ্রিন অ্যাগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার জানান, ঈদ ঘিরে খামারে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। অথচ গরমের তীব্রতায় গরু-মহিষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন।

নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ছাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের নরসিংদী যেহেতু শিল্প এলাকা এখানে একটু তাপমাত্রা সব সময় বেশিই থাকে। এই গরমে যাতে পশু পালনে তাদের কোনো ধরণের সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য আমরা খামারিদের কাছে যাচ্ছি, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, পরামর্শ দিচ্ছি। তা ছাড়া বিদ্যুতের সমস্যার জন্যও খামারে পশু পালনে সমস্যা হচ্ছে। গরম বেশি হওয়ায় গরুর মুখে রুচি কমে যাচ্ছে, যার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাচ্ছে না। যাতে করে গরুর ওজন কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া দুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় গরুর শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, খামারিদের বলে থাকি, টিনের চালে পাটের বস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখতে, এতে করে ঘরের পরিবেশটা একটু ঠান্ডা থাকে। গরুর পানিশূন্যতা কমাতে বারবার বিশুদ্ধ পানি পান করানোসহ পরিমাণমত স্যালাইন বা খনিজ লবণযুক্ত করে পানি খাওয়াতে। তবে এখনো জেলায় হিটস্টোকে কোনো গরু মারা গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই।


মন্তব্য