নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় লাল-সবুজ বাহিনীর
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪ PM , আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪ PM

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় পেয়েছে লাল-সবুজ বাহিনী। তাসমান পাড়ের এই দেশটায় কেবল টি-টোয়েন্টিতেই জয়হীন ছিল বাংলাদেশ। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচেছে। ৫ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়ে সিরিজ শুরু করেছে টাইগাররা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান এসেছে জিমি নিশামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন শরিফুল ইসলাম। জবাবে খেলতে নেমে ১৮ ওভার ৪ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। এলো-মেলো ব্যাটিংয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন রনি তালুকদার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মিলনেকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন এই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭ বলে ১০ রান।
রনি দ্রুত ফিরলেও তিনে নেমে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটে এসে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেছেন তিনি। কিন্তু আরো একবার থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি এই টপ অর্ডার ব্যাটার। ১৪ বলে ১৯ রান করে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন সৌম্য। ওয়ানডের ফর্মটাই যেন টি-টোয়েন্টিতে টেনে এনেছেন তিনি। দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার ঝোড়ো শুরু করেছিলেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। নবম ওভারে বেন সিয়ার্সের 'ইউ মিস আই হিটে' লাইন মিস করেন সৌম্য, বল আঘাত হানে সরাসরি স্টাম্পে। সৌম্যের ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ২২ রান।
সৌম্য ফিরলে তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে দেখে-শুনে ব্যাটিং করেন লিটন দাস। প্রয়োজনীয় রান রেট অনুসারেই ব্যাটিং করছিলেন তারা। তাই ক্রমশই ম্যাচ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো কিউইরা। তবে ১৪তম ওভারে হৃদয়কে ১৯ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন স্যান্টনার। পরের ওভারেই ফেরেন আফিফ হোসেনও। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা হলেও চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ।
সেই চাপ পাকা হাতে সামাল দিয়েছেন লিটন। শেখ মেহেদি তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত লিটন অপরাজিত ছিলেন ৩৬ বলে ৪২ রান করে। আর মেহেদির ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ১৯ রান।
এর আগে নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে বোলিং নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সেরা বোলিং করেন শরিফুল। ৪ ওভারের স্পেলে ২৬ রানে পান ৩ উইকেট। শেখ মেহেদী ৪ ওভারে স্রেফ ১৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। মোস্তাফিজও পেয়েছেন ২ উইকেট। তার চার ওভার থেকেও ১৫ রানের বেশি নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বাকিদের ব্যর্থতার দিনে স্বাগতিক ইনিংসে স্বস্তি দেন কেবল নিশাম। ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। শেখ মেহেদী ইনিংসের চতুর্থ বলেই বোল্ড করে দেন টিম সেইফার্টকে। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আরেক সাফল্য। শরিফুলের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা দেন বিপদজনক ফিন অ্যালেন। পরের বলটি ভেতরে ঢোকান শরিফুল। ক্রিজে এসে গ্লেন ফিলিপস বুঝতেই পারেননি। মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। ১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড।
দলের প্রবল চাপে জ্বলে উঠতে চাইছিলেন ড্যারেল মিচেল। পাল্টা আক্রমণ চালানোর মুডে ছিলেন তিনি। তবে দুই বাউন্ডারি পেলেও তাকে চেপে রাখে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে ফিরে তাকে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেট ফেলে দেন শেখ মেহেদী। ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় চলে যায় কিউইরা।
তানজিম সাকিবের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দুই চার, তিন ছক্কায় ১৪ রান নিয়ে নেয় নিউজিল্যান্ড। তাতেও ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ৩৬।
মার্ক চাপম্যান-জিমি নিশাম জুটি গড়ে দলকে জুতসই পুঁজি আনতে চেয়েছিলেন। কিছু রান বের করলেও খুব আগ্রাসী হতে পারছিলেন না তারা। ২৮ বলে দুজনের ৩০ রানের জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দশম ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পান তিনি। রিশাদকে কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন ১৯ বলে ১৯ করা চাপম্যান।
অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার নেমে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকেন নিশামকে। ৬ষ্ঠ উইকেটে জমে উঠে জুটি। এই জুটি বিপদজনক জায়গায় যেতেই ফের শরিফুলের আঘাত। ৩১ বলে ৪১ রানের জুটি থামাতে সৌম্যের অবদানও অনেক। দারুণ এক নিচু ক্যাচ হাতে জমান তিনি। থেমে যায় ২২ বলে স্যান্টনারের ২৩ রানের ইনিংস।
স্যান্টনার ফিরলেও নিশাম তুলছিলেন ঝড়। দলকে জুতসই পুঁজির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মোস্তাফিজকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে ফিফটির কাছে যাওয়ার পরের বলে ফুলটসে কাবু তিনি। মোস্তাফিজের নিচু ফুলটস তুলে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে দেন ক্যাচ। ২৯ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ৪৮ করে তিনি বিদায় নিতেই আর চ্যালেঞ্জিং পুঁজির আশা মিইয়ে যায় স্বাগতিকদের। শেষ দিকে অ্যাডাম মিলনে দুই ছক্কায় আরও কিছু রান যোগ করেন।
গত বছর প্রথমবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর চলতি সফরে এসে ওয়ানডেতেও জয় পেয়েছে টাইগাররা।