শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ

উত্তাল রাবি- ৮৬ শিক্ষার্থী আহত, ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ক্যাম্পাস
রাবি  © সংগৃহীত

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাবি সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ২৫-৩০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন। এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত ১০টার পরও সংঘর্ষ চলে। চার ঘণ্টা পার হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা।

এদিকে সংঘর্ষের পর সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোব (১২ মার্চ) ও সোমবার (১৩ মার্চ) এই দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে চালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় ওই শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাদের আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এসময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাসচালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় তার।

খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এসময় ব্যবসায়ীরা তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতেই বড় হয়ে যায় ঘটনাটি।

খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেন। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে আহত হন অনেক শিক্ষার্থী।  শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৮৬ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রাবি শিক্ষার্থী রাকিব আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

jagonews24

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পরই ঘটনাস্থলে যান বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। রাত ৮টার দিকে বিনোদপুর গেটের পাশে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানেও ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। মুহূর্তেই বিনোদপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

ওই সময় অন্ধকারের ভেতর বিনোদপুর বাজার থেকে ক্যাম্পাসের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে বিনোদপুর বাজারের দিকে পেট্রল বোমা উড়ে আসতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে বের হয়ে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও হাতে লাঠিসোটা এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।


এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারের সামনে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিনোদপুর বাজারে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন। তিনি দুই পক্ষকেই শান্ত হতে বলেন। কিন্তু এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

এরপর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসার পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। লাঠিপেটা ও ধাওয়া দিয়ে বিনোদপুর বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাজশাহী নগর পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম এবং র‍্যাবের সদস্যরা এ অভিযানে অংশ নেন। দাঙ্গা দমনের কাজে ব্যবহৃত পুলিশের একটি এপিসি গাড়ি দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা যায়। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি এসে দোকানের আগুন নেভায়।

রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়ে মহাসড়কে চলে যান। তারা আবারও দোকানপাটে আগুন দিতে শুরু করেন। এসময় পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।


মন্তব্য