যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার আনন্দানুভূতি

যবিপ্রবি
  © টিবিএম ফটো

ঈদ মানে আনন্দ-খুশির অনাবিল মিশ্রানুভূতি।রমজানের রোজা শেষে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে সবাই ছুটে চলে নিজের আপন ঠিকানায়।প্রিয়জনদের সাথে ঈদ মানেই এক বাড়তি খুশির আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই ঈদের আমেজটা একটু ভিন্ন।স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে প্রিয়জনদের ছেড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীদের পাড়ি দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেই লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে  ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি শিক্ষা কার্যক্রম নিয়েই অবিরত ছুটে চলতে হয়।রোজা অবস্থায় সেই বিরামহীন ছুটে চলার মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ে দেহ ও মন। পরিবারের সাথে বসে সেহরি ও ইফতার করার মুহূর্তগুলো ভেসে ওঠে মনের মাঝে। ঈদের ছুটি সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে মুক্ত করে সুযোগ করে দেয় পরিবার-পরিজনদের সাথে একত্রিত হওয়ার। তাইতো ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার অনুভূতিগুলো হয়ে ওঠে অসাধারণ আনন্দের।বাস ও রেলস্টেশনের করিডোরগুলো মুখরিত হয়ে উঠে ঘরমুখো শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার সেই আনন্দানুভূতি তুলে ধরেছেন মোস্তফা গালিব। 

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার আনন্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন এই স্বপ্নটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরই থাকে। রমজান মাসে রোজা রাখা, ইফতার করা, সেহেরি করা প্রতিটি কাজ যখন পরিবারের সাথে করা হয় তখন খুবই ভালো লাগে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে সবাই চিন্তা করতাম একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে বসে ইফতার করব। সবুজ চত্বরে বসে ইফতার করার সময়ই পরিবারের সাথে ইফতার করার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। রমজান মাসে প্রতিদিন ক্লাস, ল্যাব, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকার পর বাড়ি ফেরার আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হতে থাকে। আমরা স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে আসি কিন্তু একটা পর্যায়ে বাড়ি ফেরাটাও স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন ছুটির নোটিশ আসে তখনই শুরু হয় বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা। নিজ জেলার সবাই মিলে একসাথে বাড়ি যাওয়া এক অন্যরকম অনুভূতি। তখন মন শুধু একটা গান গেয়ে উঠে, "স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার....." পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ঈদ উদযাপন এ যেন জীবনের অন্যতম আনন্দের মূহুর্ত।

এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসাইন বলেন, অনেক দিন হলো বাড়িতে যাওয়া হয় না। বাড়িতে যাব যাব করতেই রমজান মাস চলে আসলো, রমজান মাস আসলেই ছুটি পাওয়া ও বাড়িতে যাওয়ার আগ্রহটা আরো বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির ক্যালেন্ডার দেখে মনে হলো ২০ রমজান থেকে ছুটি হবে,এরই মধ্যে ১০ রমজান থেকে শুরু হলো আমার দিন গণনা কবে আসবে ২০ রমজান, কবে হবে ছুটি। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ২০ রমজানে চলে এসেছি, এবার বাড়ি যাওয়ার পালা। রাতের বাসে বাড়ি যাবো।  বাড়িতে যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন এবং সমাজের সকলের সাথে মিলে ইফতারি করার একটি আনন্দ পাওয়া যাবে, সেই সাথে যুক্ত হবে ঈদের পরের আনন্দ। আর ঈদের আনন্দ মানেই পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া, তাই তো নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। বাড়ি ফেরার আনন্দটাও ঈদের আনন্দেরই একটি অংশ।

এআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, আমার বাসা চট্টগ্রামে। বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্বটা অনেক বেশি হওয়ায় খুব বেশি বাড়ি যাওয়া হয় না। সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পরিবার-পরিজন ছেড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বদাই বিরামহীন ছুটে চলা। ছুটতে ছুটতে এক সময় পেয়ে বসে ক্লান্তি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মন চাই একটু বিশ্রাম। ছুটে যেতে চাই চেনা মুখগুলোর কাছে। পেতে চাই স্নেহময়ী মায়ের হাতের পরশ, যে পরশে রয়েছে পৃথিবীর সকল ক্লান্তি দূর করার জাদু। ইচ্ছে করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে। কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে এ রকম সময় পাওয়াটা হয়ে উঠে সোনার হরিণের মতো। তাছাড়া সব সময় সব আত্মীয় স্বজনকে ঈদের সময় ছাড়া এক সঙ্গে পাওয়াও যায় না। তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি কবে ঈদ হবে আর ক্যাম্পাস ছুটি হবে।যখন সেই বহু কাঙ্ক্ষিত ছুটির সন্ধান মেলে তখন শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। মূলত তখন থেকেই মনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। টিকেট কাটা থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় গুছানো সবকিছুতেই তখন বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে সবুজ-শ্যামল গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটে চলি তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি বিরাজ করে। ইশ্! কতদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। কতদিন পর সবার সঙ্গে দেখা হবে। সেই শৈশব-কিশোরের ফেলে আসা দিনগুলোতে যারা সব সময় পাশে ছিল সেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা হবে। কত কথাই না বলার আছে তাদের সঙ্গে। ক্যাম্পাসের কথা, বন্ধুদের কথা। আরও কত মজার মজার অভিজ্ঞতাই না জমে আছে গল্পের ঝুলিতে। এই ক্যাম্পাসের হাজারো রঙিন স্মৃতির মাঝেও আমার মন তখন দোলা দিয়ে যায় গ্রামের অবারিত সবুজের মাঝে মেঠো পথের ধারে গজিয়ে উঠা কোমল সবুজ দূর্বাঘাসের ডগায় ভোরের শিশিরকণা। সেই সবুজ দূর্বাঘাসের নরম কার্পেটে খালি পায়ে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি। এই শহরে বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় জোৎস্না রাতের প্রকৃত যে সৌন্দর্য্য তা ছাপিয়ে মনের কোণে দোলা দিয়ে যায় গ্রামের খোলা আকাশের নিচে ঝিরিঝিরি বাতাসে জোৎস্নার অপার্থিব সৌন্দর্য দেখার দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন, ডাইনিং আর হোটেলের রান্না করা খাবার খেতে খেতে বিরক্ত মনগুলো তখন উতলা হয়ে উঠে মমতাময়ী মায়ের হাতে রান্না করা অসাধারণ সব খাবারের জন্য। ক্লাস, ক্লাস টেস্ট, টার্ম পেপার, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের সব চিন্তা তখন যেন কোথায় হারিয়ে যায়। ঈদে বাড়ি ফেরার এই আনন্দ যেন ঈদের আগে হয়ে উঠে আরেক ঈদ। 


ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন বলেন, শৈশবের ঈদের কথা বলছি। আহ! ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পর থেকে যে আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠতাম,  লাল-নীল আনন্দগুলো আরো রঙিন হতো। ঈদের আগে নতুন জামা কেনার যে অনুভূতি, যে আবেগ তা শত কোটি টাকা দিলেও পাওয়া যাবে না । সকালে দাপিয়ে গোসল করে নতুন জামা গায়ে দিয়ে সবার সাথে রেডি হয়ে  যেতাম। ঈদের নামাজ শেষে দাদা দাদির কবর জিয়ারত, সবার সাথে হাসি ঠাট্টা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। ঈদ সালামির আশায় বড় ভাই,আব্বার দিকে চেয়ে থাকতাম। আহ! কি সোনালী দিনগুলি।এখনো ঈদ আসে,তবে ঈদের সে অনুভূতিগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পর হতে এই প্রথম একটি রোজাও বাসায় করতে পারবো না। সেমিস্টার ফাইনাল নামক এক অদ্ভুত প্যারাময় বস্তুুর কাছে আমি হেরে গেছি। ক্যাম্পাসে ছুটি চলছে, কিন্তু ছুটির পরে যে যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে হবে,সেই ভয়ে এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি।  আমাকে শুধু মায়ের জন্য, ঈদের ঠিক আগের দিন আনন্দ টুকু শেয়ার করতে বাসায় যাবো। নিজেকে বুঝায় যে এই তো বেশিদিন নাই, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। বন্ধু বান্ধব সবাই বাড়িতে চলে গেছে, অনেকে ফোন দিচ্ছে, হোয়াটসআ্যাপে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে কবে বাসায় আসবো! কিছুই জবাব দিতে পারিনি। আমরা সবাই এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আগের মতো মানুষের কাছে মানুষ আর ছুটে আসে না। আনন্দ ভাগ করে নিতে চায় না, এটায় বাস্তবতা। সৃষ্টিকর্তা সবার মনের আশা পূর্ণ করুক, সকল যবিপ্রবিয়ানের ঈদ ভালো কাটুক এই কামনা করি।

ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী রাওয়াহা রুমি বলেন, দেশের এক প্রান্তে পরিবার রেখে অন্য প্রান্তে ভার্সিটির একাডেমিক চাপ সহ্য করার কষ্টটা যেন খাচা বন্দী পাখির মতো।দেহ আর মন পৃথক হয়ে থাকে।প্রতিটি ইফতার,প্রতিটি সেহরি প্রিয়জনদের সাথে কাটানো মুহুর্তের স্মৃতিতে বুদ হয়ে থাকে।আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একেকটি অভিবাসী  রবি ঠাকুরের একেকটি  ফটিক।এই যেন ছুটি হলো বাড়ি ফিরবো।ছুটি পেলাম বাড়ি ফিরবো।আশু পরীক্ষার চিন্তায় এই বাড়ি ফেরার আনন্দ মোটেও মলিন নয়।জীবনের কাছে এমন বাড়ি ফেরার চেয়ে সুখের কিছু বোধহয় নেই।


মন্তব্য