ছুটিতে বন্ধ পবিপ্রবি'র সব আবাসিক হল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

পবিপ্রবি
  © সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ছুটির সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব আবাসিক হল।এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন ও চরমভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র জুমাতুল বিদা, শব-ই-কদর, ঈদ-উল-ফিতর এবং বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ২৯ মার্চ হতে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসহ সকল শিক্ষা ও প্রশাসনিক বিভাগসমূহের অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সেইসাথে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ  বিকাল ৫ টা হতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সকল আবাসিক হলসমূহ বন্ধ থাকবে এবং ১৬ এপ্রিল সকাল ৬ টায় আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া হবে। বন্ধকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হলে অবস্থান না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

এভাবে প্রতিবার ছোট বড় বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির সাথে হল বন্ধ রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এর ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। করোনা পরবর্তীতে একই সাথে সেমিস্টার এবং চাকুরীর পড়াশোনার চাপ রয়েছে। এরমধ্যে এইসব ছুটিতে হল বন্ধ করায় বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী সহ দূর দূরান্তের শিক্ষার্থীদের। একদিকে পড়াশোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি, অন্যদিকে অধিকভাড়া বহন করে ছুটিতে বাড়ি যেতে বাধ্য হয়। এছাড়াও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাদের টিউশনি করে চলতে হয়। হল বন্ধ রাখায় টিউশনির পুরো মাস পড়াতে পারেন না বলে মাসিক বেতন না পেয়ে এক বুক হতাশা নিয়ে বাড়িতে যেতে হয় বলে অনেকের দাবি।


ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৪র্থ বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইজুর আলম মঈন জানান,  করোনা পরবর্তী সময়গুলোতে সেমিস্টার পরীক্ষা ও পড়াশোনার চাপ দুইটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি হলে থেকে এখন চাকুরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি। এই ছুটিতে হল বন্ধ করে দেয়ায় এখন পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও যারা টিউশনি করে নিজেদের পড়াশোনা খরচ চালায়, ১৫ দিনের টিউশনি বন্ধ দেওয়ায় আর্থিকভাবে সেসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, " হঠাৎ করে  হল বন্ধ ঘোষণা করায় বাধ্য হয়ে আমাকে আমার গ্রামের বাড়ি চলে আসতে হয়েছে। অথচ আমাদের ইদের ছুটির কিছুদিন পরেই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। টিউশনি ছিলো তাকে এই সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে আসতে হয়েছে। টিউশনিতে দীর্ঘছুটি দেয়াতে অভিভাবকদের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে।

কৃষি অনুষদের আবাসিক শিক্ষার্থী মোঃ ফরহাদ ইসলাম  বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম মাঝারি ছুটিতে হল বন্ধ ঘোষণা করা হয় না। এমনকি ঈদের ছুটির সময়ও হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা থাকে। সেখানে পবিপ্রবি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পরিমাণকে বৃদ্ধি করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ছোট বড় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ছুটিতে হল খোলা রাখা হয়। এই ঈদের লম্বা ছুটির সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ  শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। এছাড়াও পূজার ছুটি সহ অন্যান্য ছুটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ( রংপুর) ,  হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( দিনাজপুর) , বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ময়মনসিংহ) আবাসিক হল সমূহ খোলা রাখা হয়।


এই বিষয়ে রেজিস্টার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, প্রভোস্ট কাউন্সিল মিটিং এর মাধ্যমে আমাদেরকে যে সিদ্বান্ত জানিয়েছে আমরা সে অনুযায়ী নোটিশ করেছি। এরপরেও হলে থাকার বিষয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করতে হবে।

এম.কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আশরাফুল  বলেন, হল বন্ধেও শিক্ষার্থীরা থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে আগে থেকে আবেদন দিলে আমরা বিবেচনা করতাম। এখন আর এই বিষয়ে আলোচনার করার কোনো সুযোগ নাই।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ