ঈশ্বরদীতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা 

ঈশ্বরদী
ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাওন ও তার প্রেমিকা রূপা  © মোমেন্টস ফটো

ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত রুপা-শাওন প্রেম কাহিনীর নায়ক পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শাওন কে ধর্ষণ মামলার আসামী করে আদালতে পাঠিয়েছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত দুইটার সময় ভুক্তভোগী রুমানা ইসলাম রুপা বাদী হয়ে এ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। তাকে দুপুর ১২ টার পরেই  আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চত করেছেন ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রউফ।

শাওন পৌর এলাকার পূর্বটেংরি ঈদগাহ রোডের শহিদুল ইসলামের ছেলে। প্রেমিকা রুমানা ইসলাম রুপা বাড়ি নাটোর সিংড়া উপজেলায়। রুপা ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, মিথ্যা বিয়ের নাটক সাজিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার  উদ্দেশ্যে গত তিন বছর যাবত রুপার সাথে সম্পর্ক করে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে বসবাস করেছেন সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা। একসময় সম্পর্কের টানাপোড়নে ও অর্থ হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় প্রেমিক শাওন।

গত ২১ মার্চ ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকায় রাত ৮ টার সময় প্রেমিক শাওনের দেখা পেয়ে প্রেমিকা রুপা তাকে বিয়ে করার দাবী জানায় । শাওন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় তাকে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যান প্রেমিকা রুপা। পারিবারিক ভাবে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে শাওন রুপাকে নিয়ে তার বাসায় চলে আসে এবং তাকে নানারকম হুমকি-ধামকি ও ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতেও নিষেধ করে তাকে।

বিয়ের দাবীতে অনশনে যাবে নাহলে আত্মহত্যা করবে এমন চিৎকার শুনে স্থানীয় এলাকাবাসী শাওনের বাড়িতে ভিড় জমায়। শাওন বার বার বিয়ে করতে অস্বীকার করায় সকলের সামনে রুপা আত্মহত্যা করার জন্য গলাতে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে বাঁধা দেয় এবং পুলিশ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কে খবর দেয়। পরে তারা শাওনের বাড়িতে আসেন। দু’পক্ষের মধ্যে কোন সমঝোতা না হওয়ায়  পুলিশ শাওন ও রুপাকে রাত ১২ টার সময় থানায় নিয়ে যায়।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার জানান, রুপা শাওনের বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। এরপর শাওনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কাউন্সিল আব্দুল লতিফ মিন্টু বলেন, কোন রকম অপ্রিতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য সকলের সহযোগিতায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান না হওয়ার কারনে তাদের উভয়কে প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ করি। প্রশাসন আদালতের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নিবে তা মেনে নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী রুমানা ইসলাম রুপা বলেন, ঈশ্বরদী ইপিজেডে চাকরির সুবাদে শাওনের সঙ্গে তিন বছর আগে পরিচয় হয়। সে সময় শাওন ঈশ্বরদী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। সেই পরিচয়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে শাওন বিয়ে করতে অস্বীকার করায় ধর্ষণ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলে শাওনের বাবা শহিদুল ইসলাম বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এক পর্যায়ে আমার মা সহ আমাকে তার বাড়িতে আনেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের কাছে আমাদের ভাড়াটিয়া হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। শাওন এ সুযোগে আমার সঙ্গে অবাধে মেলামেশা শুরু করে। আবারও তাকে বিয়ে জন্য চাপ দিলে সে বিয়েতে অস্বীকার করে। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

শাওন আমাদের বিশেষ মুহূর্তের ছবি ভিডিও করে রেখেছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে ভিডিও ভাইরাল করে দিবে বলে হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে আমার গচ্ছিত টাকা শাওনকে দিয়েছি। সে বলেছিল এ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেই বিয়ে করবে। টাকা নেওয়ার পর থেকে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ