তিন বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হচ্ছে ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর সীমান্ত হাট

ফেনী
  © টিবিএম ফটো

ফেনীর ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর সীমান্ত হাট দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার (৯,মে) থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে। এটি চালু হলে এখানকার ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরে যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে ওঠার আশা  করছেন।

ফেনী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক দাশের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শ্রীনগর সীমান্ত হাটটি ৯ মে থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে। সীমান্ত হাটে প্রবেশে প্রতিটি টিকিটের মূল্য ২০ বিশ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি সপ্তাহে হাটবারের আগের দিন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে টিকিট কেনা যাবে। তবে নির্ধারিত হাটের দিন কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না। সীমান্ত হাটের টিকিট ক্রয় এবং হাটে প্রবেশের সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভেন্ডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। বিক্রেতাদের অবশ্যই তাদের নামে ইস্যু করা ভেন্ডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। টিকিট ক্রয় সংক্রান্ত তথ্যে হাটে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো জালিয়াতি ধরা পড়লে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সপ্তাহের প্রত্যেক মঙ্গলবার সীমান্ত হাট খোলা থাকবে। বাংলাদেশ অংশে প্রতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ হাটের আগের দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সীমান্ত হাটে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করা হবে। 

হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, দু’দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার মধুগ্রাম ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। দু’দেশের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সপ্তাহের একদিন বেচাকেনা হতো এ হাটে। এ হাটটিতে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ২৭টি করে দোকান আছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে হাটটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় দুদেশের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ হাটটি ব্যবসার জন্য যেমন চাঙা ছিল, তেমনি পণ্য বেচাকেনার পাশাপাশি দুই বাংলার মিলনমেলা বসতো। হাটকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার দরিদ্র মানুষ গড়ে তুলছিলেন জীবন-জীবিকা। তিনবছর বন্ধ থাকায় তাদের মানবেতর জীবন কাটছিল। অবশেষে হাটটি চালুর খবরে খুশি ব্যবসায়ীরা।

হাটের দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুরুল আফসার বলেন, আমরা বেশ কয়েক বছর ভালোভাবেই হাটে ব্যবসা করেছি। এখানে ব্যবসা করে অনেকের ভাগ্য ফিরেছে। দীর্ঘদিন হাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে কষ্টে আছেন। হাটটি আবার চালু হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

ভবানী দাস নামের নারী দোকানি বলেন, অনেক কষ্টে লোন করে হাটে একটি দোকান দিয়েছিলাম। ভালোই চলছিল। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পথে বসতে হয়েছে। ঠিকমতো চলতেও পারছি না। লোনের জন্য মানবেতর জীবন যাপন করছি। হাট চালু হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।

স্থানীয় সুয়া শাহ ফকির মাজারের খাদেম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাটের দিন এখানে অনেক মানুষ আসতো তারা এটা ওটা কিনতো। প্রতি হাটে কিছু টাকা আয় হতো। তা দিয়ে ভালোই চলতো। হাটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয়ও বন্ধ। এখন আমরা ভালো নেই।

ফেনী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) অভিষেক দাশ বলেন, বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৯ মে থেকে আগের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী প্রত্যেক সপ্তাহের মঙ্গলবার বর্ডার হাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ অংশে প্রতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ হাটের আগের দিন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও আগত ক্রেতা বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


মন্তব্য