মহানন্দা নদীতে দুই সীমান্ত পাড়ে সূর্য পূজা করেন তিন হিন্দু সম্প্রদায়

সারাদেশ
সূর্য পূজা   © টিবিএম ফটো

তেঁতুলিয়ায় বাংলাবান্ধা সীমান্ত নদী মহানন্দায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে ভারত-বাংলাদেশের হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সূর্য পূজা পালিত হয়েছে। দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিএসফের জোরদার টহলের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হয় সূর্য পূজা উৎসব।  

সোমবার (৩১ অক্টোবর) সূর্যোদয়ের সময় স্নান, পূজা-অর্চনা এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মনোবাসনা পূর্ণ, আপদ-বিপদ দূরীকরণ, বিভিন্ন মানত পূরণে এই তিন সম্প্রদায়ের মানুষ ছটব্রতের মাধ্যমে সূর্য নারায়ণের পূজা করেন তারা। এ পূজায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে।

রবিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর ওপারে ভারতের ফাঁসিদেওয়া এলাকায় হাজার হাজার  সনাতন ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পূন্যার্থীরা তিনদিন ব্যাপী সূর্য পূজা পালন করছেন। তাদের সাথে এপারের বাংলাদেশের একই সম্প্রদায়ের মানুষরাও পালন করছেন এ উৎসব। পূজারীরা উপবাস থেকে ফুল, প্রসাদ, বাদ্য-বাজনাসহ পূজার বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে মহানন্দার নদীতে সূর্যাস্তের পূর্ব মুর্হুতে ভক্ত ও পূণ্যার্থীরা ডালা-কুলায় সাজানো প্রসাদ নিয়ে পূজা করছেন। মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করে দিনভর উপবাস থেকে র্সূযাস্তের সময় নারীরা নানা উপাচারে সূর্যদেবের আরাধনা করেন। এ পূজা দেখতে দু’পাড়েই হাজার হাজার দর্শনার্থীদেরও সমাগম ঘটে।

রিতু, ঝিনুক, চন্দন ও সাজুর সাথে কথা হলে তারা জানান, ভোর থেকে সবাইকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থাকতে হয়। পরের দিন উপবাস থাকার পাশাপাশি বিকেলে মহানন্দার নদীর তীরে গিয়ে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে সূর্যকে আহ্বান করা হয়। শেষ দিনে সূর্যোদয়ের আগে তারা দলবেঁধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান, পূজা-অর্চনা, প্রার্থনা এবং সূর্য নারায়ণকে প্রণতি জানিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

ঋতু জানান, সূর্যকে পূজা করা হয় বলে এটিকে সূর্য পূজা বলা হয়। এ পূজায় আমরা খুব আনন্দ করি। এ পূজায় তিনদিন উপবাস থাকতে। বিশেষ করে এখানে ইন্ডিয়ায় এ নদীর তীরে করা হয়, আমরাও তাদের সাথে এ উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করি।

চন্দন ও সুমন জানায়, প্রতিবছর আমরা এই মহানন্দার দু’পারের ভারত-বাংলাদেশ মিলে এই সময়ে ছট বা সূর্য পূজা পালন হয়ে থাকে। দুদেশের আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষরা এ উৎসব ভালোভাবে উদযাপন করে থাকি। আর এ পারে ক্ষুদ্র হরিজন সম্প্রদায় থাকায় আমাদের এ উৎসবে লোকজন ভারতের মতো হয় না। তবে তাদের সাথেই সীমান্তরেখা দূরত্ব মেনেই উদযাপন করি সূর্যপূজা।

সাজু ও ঝিনুক দম্পতি জানায়, এখানে ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলার মতোই সূর্যপূজা হচ্ছে। আমরা এখানে প্রথম এসেছি, খুব ভালো লাগতেছে। প্রতিবছর এখানে আবারও এসে উপভোগ করতে চলে আসবো।

চন্দন ও সাজুর সাথে কথা হলে তারা জানান, ভোর থেকে সবাইকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থাকতে হয়। পরের দিন উপবাস থাকার পাশাপাশি বিকেলে মহানন্দার নদীর তীরে গিয়ে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে সূর্যকে আহ্বান করা হয়। শেষ দিনে সূর্যোদয়ের আগে তারা দলবেঁধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান, পূজা-অর্চনা, প্রার্থনা এবং সূর্য নারায়ণকে প্রণতি জানিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

সূর্য পূজা সম্পর্কে জানা যায়,  সনাতন ধর্মাবলম্বীর হরিজন, রবিদাস ও রজক সম্প্রদায়ের মানুষগুলো ডালা-কুলা সাজিয়ে র্সূয দেবতার পূজা করেন। প্রতিবছর কালী পূজার পর শুক্ল পক্ষের ষষ্টি তিথিতে সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে তিন বছর ধরে বাংলাবান্ধার কাশিমগঞ্জ ও ভারতের ফাঁসিদেওয়া ঘাট এলাকায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এপারের হরিজন (মেথর), রবিদাস (মুচি) ও রজক (ধোপা) সম্প্রদায়ের লোকজন সংখ্যালঘু। কয়েক বছর ধরে তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। পেশা পরিবর্তন করতে না পারায় অভাব-অনটনের মধ্যে নিজেদের সাধ্যমতো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে একে অন্যকে নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছেন। নতুন জামা-কাপড় পরে পূজা উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন।


মন্তব্য