লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে হঠাৎ অসুস্থ এরদোগান, তার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা গুজব

এরদোগান
লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে হঠাৎ অসুস্থ এরদোগান  © এনবিসি নিউজ

তুরস্কে একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান। সাক্ষাৎকারের মধ্যে মি. এরদোয়ান অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ২০ মিনিট বিরতির পর অনুষ্ঠানটি শুরু হলে মি. এরদোয়ান জানান যে ‘পাকস্থলীর ফ্লু’ এর কারণে তিনি সাময়িকভাবে অসুস্থ বোধ করছেন। পরে তিনি টুইট করেন যে: ‘চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আজ আমি বিশ্রাম করবো।...আগামীকাল থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।”

ঊনসত্তর বছর বয়সী মি. এরদোয়ান তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু ছয়টি দলের একটি জোটের নেতা হিসেবে নির্বাচন করছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অসুস্থ হওয়ার পর অনেক নেতার মত তিনিও তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফাহরেতিন কোচা বৃহস্পতিবার জানান যে প্রেসিডেন্টের শরীরের অবস্থা ভালো। মি. এরদোয়ান যত দ্রুত সম্ভব তার পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে ‘গুজব’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে লাইভ সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় মি. এরদোয়ান যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তার পাশে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

টেলিভিশন চ্যানেল উলকে টিভি ও কানাল সেভেন – যাদেরকে সরকারের সমর্থক হিসেবে মনে করা হয় – মি. এরদোয়ানের সাক্ষাৎকারটি সরাসরি সম্প্রচার করছিল। একজন সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করার পরপরই ক্যামেরায় তার চিন্তিত মুখ দেখা যায়। এরপরই টেলিভিশন স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়।

মি. এরদোয়ান অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই টিভিতে এসে ব্যাখ্যা দেন যে অসুস্থ থাকায় তিনি সূচী বাতিল করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি দু:খপ্রকাশ করে বলেন, “ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের অনেক সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।”

এই অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তুরস্কের বাইরের কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে জল্পনা শুরু হয় যে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তবে মি. এরদোয়ানের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান ফেপাহরেতিন আলতুন প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে এসব ‘ভিত্তিহীন দাবি অস্বীকার’ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়েছেন। যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে ‘গুজব’ ছড়ানো হয়েছে, সেসব অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেছেন তিনি।

এসব গুজবের জবাব দিয়ে তিনি টুইট করেন: “যত মিথ্যা তথ্যই ছড়ানো হোক, তুরস্কের মানুষ ১৪ই মে’র নির্বাচনে তাদের নেতা এরদোয়ানের সাথে থাকবে এবং তার একে পার্টি বিজয়ী হবে।”

গত ২১ বছর ধরে মি. এরদোয়ান ক্ষমতায় আছেন। এই প্রথমবার টিভিতে লাইভ ইন্টারভিউ চলাকালে তার অসুস্থ হওয়ার মত ঘটনা ঘটলো। এর আগে ২০১১ এবং ২০১২ সালে তার পাকস্থলীতে অস্ত্রোপচার হয়। সেসময়ও তার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা কানাঘুষা তৈরি হয়েছিল।

অসুস্থ থাকায় স্থগিত প্রচারণা
নির্বাচন নিয়ে সবশেষ জরিপের হিসেব অনুযায়ী এই নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মি. এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলুর জয়ের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৪ই মে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে পারে এর দুই সপ্তাহ পর।

বুধবার আনাতোলিয়ায় তিনটি নির্বাচনী জনসভায় মি. এরদোয়ানের যোগ দেয়ার কথা থাকেলেও তিনি সেগুলো বাতিল করেন। তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বাসায় থাকছেন।

এরপর তিনি বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত ইভেন্টগুলোও বাতিল করেন, যার মধ্যে ভূমধ্যসাগর উপকূলে আক্কুইয়ু গ্রামে তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও ছিল। ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলেও অনলাইনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে স্থাপনাটির উদ্বোধন করেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে মি. এরদোয়ানকে ক্লান্ত ও ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল।

আক্কুইয়ুর চারটি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের সবগুলোর সিংহভাগ মালিকানাই রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান রোসাটমের। এগুলো তৈরি করতে বহু বছর লেগেছে। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই পাওয়ার প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি এই সময় রাখা হয়েছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে দুই প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে কথা বলেন। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয় যে তারা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী।

শাসনামলের শুরুর দিকে রাস্তাঘাট ও হাসপাতালের মতো অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মি. এরদোয়ান। তুরস্কের সংসদ সদস্য নির্ধারণ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নির্বাচনের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১৪ই মে। এই ধাপে যদি কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অর্ধেকের বেশি ভোট না পায়, তাহলে দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। তুরস্কের বাইরে থাকা ৩৩ লাখ তুর্কি নাগরিক এরই মধ্যে ভোট দেয়া শুরু করেছেন। তাদের ভোট চলবে ৯ই মে পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী মি. কিলিচদারোগলু ও তার শরিকরা নির্বাচন জিতলে সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা সহ মি. এরদোয়ানের সময়ের অনেক নিয়মই পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ