রায়িসির সিরিয়া সফর মধ্যপ্রাচ্যে বিরাট পরিবর্তনের আভাস: ইসরাইলি গণমাধ্যম

সিরিয়া-ইরান
বাশার আল আসাদ ও ইব্রাহিম রায়িসি  © দ্য টাইমস অব ইসরাইল

ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির নেতৃত্বে একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল আজ সিরিয়া সফরে গেছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তার এ সফর।

দুদিনের এই সফরে আর্থ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে দুদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। নানা কারণে ইরানের প্রেসিডেন্টের সিরিয়া সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ সালে সিরিয়ায় সংকট শুরুর পর এটাই ইরানের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম সিরিয়া সফর। অবশ্য এ দীর্ঘ সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদও দুই দফায় ইরান সফরে এসে সর্বোচ্চ নেতার সাথে দেখা করে গেছেন।

সিরিয়ায় বিদেশি মদদপুষ্ট দায়েশ বা আইএস সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে আর্থ-রাজনৈতিক, সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে দেশটি গভীর সংকটে নিমজ্জিত ছিল। অন্তত ৮০টি দেশ থেকে প্রায় দেড় লাখ সন্ত্রাসী এনে সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। আইএসসহ বিভিন্ন  জঙ্গি সংগঠনগুলো সিরিয়ার বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে এবং নিরাপত্তাহীনতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ অবস্থায় ইরান এগিয়ে আসে এবং সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসির কুদস ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল সোলাইমানি সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও জনগণের পাশে দাঁড়ান এবং শেষ পর্যন্ত সিরিয়া সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে বাশার আল আসাদ সরকারের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলো এ বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর আরব দেশগুলোর জোট আরব লীগও সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে এগিয়ে আসে এবং এই জোটে সিরিয়াকে ফিরিয়ে আনে। এছাড়া, জর্দান, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাক ও  মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত সোমবার আম্মানে বৈঠকে মিলিত হয়ে সিরিয়া সংকট অবসানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এ কারণে ইরানের প্রেসিডেন্টের সিরিয়া সফরের গুরুত্ব বেড়ে গেছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইরানের প্রেসিডেন্টের এ সফরের ফলে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলোর অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। এমন সময় এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান সম্প্রতি লেবানন সফরে গিয়ে হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের মহাসচিব যিয়াদ আল নাখালের সাথে সাক্ষাত করেছেন। ইসরাইলের থার্টিন টিভি চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে আব্দুল্লাহিয়ানের লেবানন সফর ও ইব্রাহিম রায়িসির সিরিয়া সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছে, ইসরাইলের বিভিন্ন মহল ইরানের এসব তৎপরতাকে মধ্যপ্রাচ্যে বিরাট পরিবর্তনের আভাস বলে মনে করছেন। বিশেষ করে ইসরাইলের অভ্যন্তরে যখন গণ্ডগোল চলছে তখন এসব সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইসরাইলের এই টিভি চ্যানেলে আরো মন্তব্য করেছে সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর ইরান এখন ইয়েমেন থেকে নজর ফিরিয়ে সিরিয়া ও লেবাননের দিকে নজর দেয়ার চেষ্টা করবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরাইলিদের মধ্যে এ উদ্বেগ থেকে বোঝা যায় পশ্চিম এশিয়ায় যা ঘটছে তা ইসরাইলের অনুকূলে নয়। এ ছাড়া ইসরাইলের প্রধান মিত্র আমেরিকার প্রভাবও দিন দিন কমতে থাকায় পরিস্থিতি ইসরাইলের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে উঠেছে। কেননা তারা বুঝতে পেরেছে সিরিয়া, লেবানন ও গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছে।

এ ছাড়া, সিরিয়া স্থিতিশীল হওয়ায় সিরিয়ার জন্য অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং ইরানও লাভবান হবে। এসব কারণে ইরানের প্রেসিডেন্টের এ সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্র: পার্স টুডে


মন্তব্য