হিজবুল্লাহর হামলার মুখে লেবানন সীমান্ত থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধে এবার গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শিয়াপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। লেবানন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ছে ইসরায়েল ভূখণ্ডে। এবার এই হামলার মুখে লেবানন সীমান্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ইসরায়েল। 

সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, লেবানন সীমান্ত এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ২৮টি অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। 

সোমবার (১৬ অক্টোবর) ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:- হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা নেই: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আইডিএফ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ২৮টি সম্প্রদায় হলো- গাজার, দিশোন, কেফার ইউভাল, মার্গালিওট, মেটুলা, আভিভিম, ডোভেভ, মায়ান বারুচ, বারআম, মানারা, ইফতাহ, মালকিয়া, মিসগাভ আম, ইরন, দাফনা, আরব আল-আরামশে, শ্লোমি, নেতুয়া, ইয়া'রা, শ্তুলা, মাতাত, জার'ত, শোমেরা, বেটজেট, আদমিত, রোশ হানিকরা, হানিতা এবং কাফার গিলাদি।

লেবানন থেকে ক্রমবর্ধমান হামলার মধ্যে উত্তর সীমান্ত শহরগুলির অনেক বাসিন্দা ইতিমধ্যেই দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নিয়েছে।

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড. ড্যানিয়েল হাগারি সোমবার বলেছেন যে হিজবুল্লাহ যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে তবে "মারাত্মক" প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে।

আরও পড়ুন:- ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে ফিলিস্তিনি-বিরোধী ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু কেন?

হাগারি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “ইরানের নির্দেশে ও সমর্থনে লেবানন রাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের বিপন্ন করে আমাদের অপারেশনাল প্রচেষ্টাকে (গাজা উপত্যকা থেকে দূরে) সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করার জন্য হিজবুল্লাহ গতকাল বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।”

তিনি বলেন, "আমরা উত্তর সীমান্তে আমাদের বাহিনী বাড়িয়েছি এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে কোনো কার্যকলাপের আক্রমণাত্মক জবাব দেব।" “যদি হিজবুল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করার সাহস করে, প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।”

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহত বাড়ছেই। সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত গাজায় ২ হাজার ৮০৮ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।

ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে মোট ১৯৯ জনকে অপহরণ করেছে ফিলিস্তিনির ইসলামপন্থী দল হামাস। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর এমনটি জানায়।

আরও পড়ুন:- গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিরব দেশ ও সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া নিন্দা ইরান প্রেসিডেন্টের

সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৯৯ জন অপহরণ হওয়ার খবর জানতে পেরেছি।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের হামাস এবং জিহাদ আন্দোলন-সহ কয়েকটি সংগঠনের যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের অভ্যন্তরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদার ইসরাইলের লাগাতার হত্যাযজ্ঞ ও দমনপীড়ন এবং পবিত্র আল-আকসা মসজিদের অবমাননার অবসান ঘটানোর জন্য তারা এই অভিযান চালিয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গাজায় বর্বর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের অমানবিক এই হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ২,৮০৮ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ১০,৮৫৯ জন। দখলকৃত পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছে ৫৭ জন, আহত ১২০০ জন। এছাড়া গাজায় ধ্বংসস্তুপের নিচে ১০০০ মানুষ আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে ইসরায়েল জানিয়েছিল, গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা চালিয়ে ১৫৫ জনকে অপহরণ করে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

সূত্র: গার্ডিয়ান, টাইমস অব ইসরায়েল