গাজায় মানবিক বিপর্যয়: পশ্চিমাদের ‘নির্লজ্জ দ্বিচারিতা’র প্রকাশ: জর্ডানের রানি

গাজা
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা (ইনসেটে জর্ডানের রানি রানিয়া আব্দুল্লাহ)  © সংগৃৃহীত

ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের জন্য পশ্চিমাদের ‘নির্লজ্জ দ্বিচারিতাকে’ দুষলেন জর্ডানের রানি রানিয়া আল আবদুল্লাহ। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় পশ্চিমা নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।

জর্ডানের রানি বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরব নেতাদের সম্পর্ক অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে রানিয়া আল আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে বিপর্যয় ঘটছে তার প্রতি বিশ্বের প্রতিক্রিয়া দেখে জর্ডান সহ মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ বিস্মিত ও হতাশ। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা বিশ্বনেতাদের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা লক্ষ্য করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবর যা ঘটেছিল তাতে পুরো বিশ্ব অবিলম্বে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতিও সবাই দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে আমরা কী দেখলাম? গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে এখন পুরো বিশ্বই নীরব হয়ে বসে আছে।’

আরও পড়ুন:- বাইরের দেশগুলো ইসরায়েলকে সমর্থনের নামে আগুনে ঘি ঢালছে: এরদোগান

জর্ডানের রানি আরও বলেন, ‘আধুনিক যুগে এমন মানবিক দুর্ভোগ এই প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে। অথচ, বিশ্ব যুদ্ধবিরতির আহ্বান পর্যন্ত জানাচ্ছে না। এই নীরবতা আমাদের বধির করে তুলছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ এখন মনে করে, পশ্চিমা বিশ্বই এই মানবিক বিপর্যয়ে জড়িত।’

রানিয়া আল আবদুল্লাহ বলেন, ‘বন্দুকের মুখে পুরো একটি পরিবারকে হত্যা করা ভুল কিন্তু বোমা বর্ষণ করে তাদের ধ্বংস করে দেওয়াটা ঠিক আছে; আমাদের কি এমনটাই বলা হচ্ছে? আমি বলতে চাচ্ছি, ঠিক এখানেই একটি নির্লজ্জ দ্বিচারিতা করা হচ্ছে। আরব বিশ্ব এ ঘটনায় হতবাক ও মর্মাহত।’

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল বন্দী করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। প্রতিক্রিয়ায় ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় ৫ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি শিশু। অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেখানে জাতিসংঘের অন্তত ৩৫ জন কর্মীও নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েল বলেছে যে তারা হামাস সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করছে, এবং বেসামরিক অবকাঠামোর আড়ালে লুকিয়ে থাকার জন্য গোষ্ঠীটিকে দায়ী করেছে।

আরও পড়ুন:- যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যের জের, জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি ইসরায়েলের

"মা হিসাবে, আমরা ফিলিস্তিনি মায়েদের দেখেছি যারা তাদের সন্তানদের নাম তাদের হাতে-পায়ে লিখে রাখছে। তারা জানে তাদের শেলের আঘাতে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা, তাই তাদের সনাক্ত করার জন্য এটা করছে।" রানিয়া বলেন। "আমি শুধু বিশ্বকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ফিলিস্তিনি মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পৃথিবীর অন্য মায়ের মতোই ভালোবাসে।"

পশ্চিমের প্রতি হতাশা বাড়ছে
আরব নেতারা ইসরায়েলের অবরোধ প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনিচ্ছা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। জর্ডান, মিশর এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সাথে জর্ডানে একটি পরিকল্পিত শীর্ষ বৈঠক থেকে সরে এসেছে।

ওয়াশিংটন, ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের গাজায় প্রতিশোধ নেওয়ার সমর্থনে অটল থেকেছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।

সোমবার সিএনএনকে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ফর স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বয়ক জন কিরবি বলেন, "আমরা এখনই যুদ্ধবিরতির কথা বলছি না।"

“আসলে, আমরা বিশ্বাস করি না যে এটি যুদ্ধবিরতির সময়। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। হামাসের নেতৃত্বের অনুসরণ করার জন্য তাদের এখনও কাজ আছে, আমরা তাদের সমর্থন করতে যাচ্ছি বা তাদের আরও নিরাপত্তা সহায়তা দিতে যাচ্ছি।”

আরও পড়ুন:- ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে বলেছেন যে "মানবিক বিরতি" বিবেচনা করা উচিত, তবে উল্লেখযোগ্যভাবে "যুদ্ধবিরতি" শব্দটি এড়ানো উচিত।

যাইহোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতির খসড়া রেজুলেশনের সমালোচনা করে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ একটি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে। যুক্তরাজ্যও এই প্রস্তাব অনুমোদন করতে অস্বীকার করে।

এর আগে রাশিয়ান যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব একইভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।

জাতিসংঘের সাথে কাজ করা নয়জন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ গত বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইল তার বর্তমান অভিযানে "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" করছে। বিশেষজ্ঞরা যোগ করেছেন, "জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর" সহ গাজার উপর "অকথ্যভাবে নিষ্ঠুর" অবরোধ আন্তর্জাতিক এবং অপরাধমূলক আইনের লঙ্ঘন।