‘কোথাও কোন রুটি নেই, আর আমরা চাই না আমাদের শিশুরা ক্ষুধার্ত ঘুমাক’

গাজা
  © সংগৃৃহীত

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জাতিসংঘ পরিচালিত ট্রেনিং কলেজ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য অনেকগুলো তাঁবু স্থাপন করেছে। আর তাঁবুর পাশেই বড় বড় কড়াইতে লাল সসের মধ্যে ফুটছে বিনস।

রাঁধুনিদের একজনকে দেখা গেল গরম গরম খাবার পরিবেশন করতে; পাশেই ধাতব পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্ষুধার্ত শিশুর দল। একজন বলে উঠল, "আরেকটু খাবার দিন দয়া করে।" বাকি শিশুরাও হইচই করছিল।

"আংকেল, আমি অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করে আছি", বলে উঠল আরেকজন।  "আমায়ও আরেকটু দিন না আংকেল, শুধু ঝোল হলেও চলবে", পাশ থেকে ভেসে এলো। 

আরও পড়ুন:- ইসরাইলকে সমর্থনকারী দেশের কূটনীতিকদের লিবিয়া ছাড়ার নির্দেশ

"দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধাকে দুইবার পরিবেশন করতে ভুলো না যেন। তার পরিবারে ১৫ জন সদস্য", বললেন তিনি।

এখানকার রাঁধুনি বা বাবুর্চি আবু ইব্রাহিম জাকাউত জানান, বুধবার এই উদ্যোগের সূচনা যা এখন পর্যন্ত ৫০টি পরিবার বা প্রায় ৫০০ জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

জাকাউত বলেন, "এর ভাবনাটি দেন বাইত হানুনের আবু আল-আবেদ আল-মাসরি, যিনি তার ৫০ এর অধিক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।"

লোকজন তাদের কাছে থাকা খাবার আর বাসনকোসন দান করা শুরু করে; এরপর জাকাউতের পরিবারের সদস্য সহ স্বেচ্ছাসেবকেরা সেসব একত্র করে সকলের জন্য রান্না চড়ায়। প্রথম দিনে মসুর ডাল রান্না করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজার ওপর ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন:- প্রথমবার গাজায় স্থল হামলা চালালো ইসরায়েল

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এখন পর্যন্ত ৭ হাজারের ওপর ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২,৯১৩ শিশু এবং ১,৭০৯ জন নারী। এছাড়াও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোঁজ মেলেনি ১,৯৫০ জন এবং ৯৪০ শিশুর।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লিফলেট ছড়িয়ে এবং ফোনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে, তারা যেন গাজার উত্তর থেকে সরে যায়।

জাকাউত এবং তার পরিবারের ১০ সদস্য বাধ্য হয়ে উত্তর গাজার বাইত হানুনে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণে খান ইউনিসের দিকে চলে আসেন।

"মানুষ আমাদের যে খাবার বা উপকরণই দান করবে, আমরা তা রাঁধব। কোথাও কোনো রুটি নেই এবং আমরা চাইনা যে, আমাদের শিশুরা ক্ষুধার্ত ঘুমাক", যোগ করেন জাকাউত। 


মন্তব্য