মুসলিমদের রক্ত ঝরলে পশ্চিমারা আর আইনের তোয়াক্কা করে না: তুর্কি প্রেসিডেন্ট

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত কয়েকজন শিশু। ইসরায়েলি হামলায় ২,৯১৩ শিশু নিহত হয়েছে। (ইনসেটে এরদোগান)  © সংগৃৃহীত

গত ২০ দিন ধরে গাজার ইসরায়েলের ক্রমাগত বোমা হামলার ঘটনায় পশ্চিমা দেশের সরকারগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সংঘাতময় উপত্যকাটিতে মুসলিমদের রক্ত ঝরছে বলেই পশ্চিমা দেশগুলো এই ইস্যুতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না- এমন মন্তব্য করেছেন মুসলিম বিশ্বের এই প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসির। 

ইসরায়েলের হামলার প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, "মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র এখন কোথায়? তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) এটাকে আর তোয়াক্কা করবে না যদি না এটা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করে। এমনটা কেন? কারণ যে রক্ত ঝরছে তা মুসলিমদের রক্ত।"

গাজার ইসরায়েলের বোমা হামলার বিষয়ে অনেকটা শক্ত অবস্থানই নিয়েছেন এরদোয়ান। যার ধারাবাহিকতায় তিনি পূর্ব নির্ধারিত ইসরায়েল সফল বাতিল করেছেন।

আরও পড়ুন:- ‘কোথাও কোন রুটি নেই, আর আমরা চাই না আমাদের শিশুরা ক্ষুধার্ত ঘুমাক’

গত বুধবার তুরস্কের পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে এরদোয়ান বলেন, "আমাদের ইসরায়েলে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সেটা বাতিল করা হয়েছে। আমরা যাব না।"

একইসাথে গত মাসে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণত পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে করমর্দন করায় এখন অনুশোচনা বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী এই নেতা। 

অন্যদিকে পশ্চিম তীর শাসনকৃত ফিলিস্তিন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি অবশ্য ইসরায়াইয়ের ক্রমাগত বিমান হামলাকে 'প্রতিশোধের যুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন:- ইসরাইলকে সমর্থনকারী দেশের কূটনীতিকদের লিবিয়া ছাড়ার নির্দেশ

নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে বক্তব্য প্রদানকালে মালিকি এ মন্তব্য করেন। একইসাথে বর্তমানের ইসরায়েলের হামলাকে পূর্বের তুলনায় ভয়াবহ উল্লেখ করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি। 

গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলার জন্য ইসরায়েলের কড়া ভাষায় নিন্দা করেন এরদোয়ান। হামাসের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, "হামাস কোন সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, তারা মুক্তিকামীদের একটি দল, তারা মুজাহিদ যারা নিজেদের ভূমি ও জনগণকে রক্ষায় লড়ছে।"

সম্পর্কোন্নয়নের পথে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করে এরদোয়ান বলেন, "আমাদের সৎ উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু (নেতানিয়াহু) তার ফায়দা নিয়েছেন। অথচ আমরা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগোলে সম্পর্ক অন্যরকম হতে পারতো। কিন্তু, দূর্ভাগ্যজনক যে তা এখন আর হবে না।" 

আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনপন্থী লক্ষাধিক একাউন্ট লক করে দিয়েছে মেটা

দুই দশক ধরে তুরস্ককে নেতৃত্ব দেওয়া এরদোয়ান ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সরব একজন রাষ্ট্রপ্রধান।  গত ১৭ অক্টোবর গাজার একটি হাসপাতালে ইসরায়েল হামলা করে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার পর থেকেই এরদোয়ান ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। 

গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজার ওপর ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এখন পর্যন্ত ৭ হাজারের ওপর ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২,৯১৩ শিশু এবং ১,৭০৯ জন নারী। এছাড়াও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোঁজ মেলেনি ১,৯৫০ জন এবং ৯৪০ শিশুর।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লিফলেট ছড়িয়ে এবং ফোনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে, তারা যেন গাজার উত্তর থেকে সরে যায়।