সকালে খাবার না খেলে যেসব সমস্যায় পড়বেন

সকালে খাবার না খেলে যেসব সমস্যায় পড়বেন
  © প্রতীকী ছবি

গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা প্রায় মানুষের এখন নিয়ম হয়ে গেছে। বিশেষ করে শহুরে মানুষেরা মধ্যরাতের আগে ঘুমানোর কথা চিন্তাও করেন না। ফলে তারা ঘুম থেকে উঠেন বেলা করে। তাই অনেকে সকাল আর দুপুরের খাবার একবারে খান। কেউ আবার ব্যস্ততার অজুহাতে সকালের নাশতা না করেই কাজে বের হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার ওজন কমাতে সকালের নাশতা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। যদিও নাশতা এড়ালে ওজন কমে- এটি একেবারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ সকালের দিকে শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বেশি থাকার ফলে যা খাওয়া হয় তা সহজে হজম হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: প্রাকৃতিকভাবে এসি ছাড়াই যেভাবে ঘর ঠান্ডা রাখবেন

সকালের নাস্তা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপরই সারাদিন শরীরের শক্তি নির্ভর করে। সকালে পুষ্টিকর খাবারে পেট ভরালে সারাদিন অ্যানার্জি মেলে ও কম ক্লান্তিবোধ হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সকালের নাস্তা সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিনের সকালে ২৬০ ক্যালোরির বেশি খাবার খায়, তাদের ওজন যারা সকালে নাস্তা করে না তাদের তুলনায় অন্তত এক পাউন্ড বেশি হয়। তবে সকালে ক্যালসিয়াম ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এতে শরীরে শক্তি জোগায়। সকালে ভরপেট খেলে দিনে খুব বেশি ক্ষুধা লাগে না। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতেও সকালে নাস্তা জরুরি।

পুষ্টিবিদদের মতে, সকালের খাবার কখনো এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। কারণ ব্রেকফাস্ট আপনাকে দেবে শক্তি। সকালে ভরপেট নাস্তা করলে দিনের পরের দিকে আপনার খুব বেশি ক্ষিদে লাগবে না। ফলে এটা সেটা খাওয়ার দরকার পড়বে না। আর আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর জন্য নাস্তা বেশ জরুরি। চলুন জেনে নিই সকালের নাশতা শরীরের জন্য কেন জরুরি-

সকালে খাবার না খেলে যেসব সমস্যায় পড়বেন

মন ভালো রাখে : সকালের নাশতা না খেলে পেটে ক্ষুধা থাকে আর পেটের ক্ষুধা আমাদের মস্তিষ্ককেও উত্তেজিত করে ফেলে। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কাজে মন বসে না। তাছাড়া সকালের নাশতা মস্তিষ্কের সুখি হরমোন সেরোটোনিনের নিঃসরণ বাড়ায়। এটি ঘুম ও ক্ষুধার ভারসাম্য ঠিক রাখে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় : সাধারণত সকালের নাশতায় দুধ, রুটি, সবজি, ডিম ইত্যাদি খাওয়া হয়। এ সব খাবারই মস্তিষ্কে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কর্মশক্তি সঞ্চয় : সকালের নাশতা করার মাধ্যমে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি সঞ্চয় করি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৩ বেলা খাবারের মধ্যে সকালের নাশতা অপেক্ষাকৃত ভারি হওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। সকালে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে কাজ করতে সুবিধা হয়, দুর্বল লাগে না। তাছাড়া সকালের নাশতা তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং ক্যালরি পুড়িয়ে ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।

ওজন হ্রাস পাওয়া : এটি নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। অনেক গবেষণা বলছে, সকালের নাশতা করলে ওজন বৃদ্ধি পায়, না করলে ওজন কমতে থাকে। মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে বলছেন, সকালে নাশতা করা বন্ধ করলে দৈনিক ক্যালরির পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য নাশতা খুবই কার্যকর উপায়। তবে আরেকটি গবেষণা বলছে, সকালের নাশতা ওজন হ্রাস করে। কারণ একবারে দুপুরের খাবার খেলে অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়। সকালের নাশতা না করে অনেকে আবার মাঝখানে ফাস্টফুড, বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন, যা ওজন বাড়ায় ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে : সকালের নাশতা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নাশতা না করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে অনেক বেশি জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া সকালের নাশতা অনেক ধরনের রোগ থেকেও রক্ষা করে আমাদের দেহকে।

ঠিক তেমনই সকালের নাস্তা বাদ দিলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো ডিমেনশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি চারগুণ বাড়িয়ে তোলে সকালে নাস্তা না করা হলে।

২০১১ সালে জাপানিজ জার্নাল অব হিউম্যান সায়েন্সেস অব হেলথ-সোশ্যাল সার্ভিসেস এ প্রকাশিত ফলাফলে জানা গেছে এই তথ্য। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল জীবনযাত্রার অভ্যাস ও ডিমেনশিয়ার মধ্যকার যোগসূত্রতা বোঝা। সকালে নাস্তা বাদ দিলে আরও যেসব রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়-

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি : দিনের পর দিন সকালের নাস্তা না করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ সকালে নাস্তা এড়িয়ে যান তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশের বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্বাস্থ্যকর নাস্তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি : যারা সকালের নাস্তা করেন না, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণা পরিচালিত হয় প্রায় ৬ বছর ধরে। মোট ৪৬ হাজার ২৮৯ জন নারীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, যেসব নারীরা সকালে নাস্তা বাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।

ক্ষুধা বাড়ে : যদি ওজন কমাতে চান তাহলে ভুলেও সকালের নাস্তা এড়াবেন না। কারণ সকালের নাস্তা এড়ালে ক্ষুধা বাড়বে। তখন সামনে যা পাবেন তাই খেতে ইচ্ছে করবে।

ক্লান্তিবোধ : সকালের নাস্তা না করলে মুড সুইং ও শক্তির ঘাটতি দুটিতেই প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালের নাস্তা করেন না তারা সবচেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন ও সবকিছু ভুলে যান বেশি।

চুল পড়া শুরু হয় : সকালের নাস্তা এড়িয়ে গেলে প্রোটিনের মাত্রা ভয়ংকরভাবে কমে যায় শরীরে, যা কেরাটিনের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। কেরাটিন কমে গেলে চুলের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে চুল পড়তে শুরু করে।

পেটের সমস্যা তৈরি করে : রাতে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমানোর কারণে পেট খালি হয়ে যায়, তার ওপরে যদি সকালে না খাওয়া হয় তাহলে বিপাকক্রিয়াও কমতে শুরু করে। যা পেটের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।