রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে ২০রোহিঙ্গাসহ ২৭সদস্যদের প্রতিনিধি দল

রোহিঙ্গা
  © সংগৃহীত

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে গেছে বাংলাদেশে অবস্থানরত ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

আজ শুক্রবার সকালে ৯টার পর টেকনাফ পৌরসভা জালিয়াপাড়াস্থল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে বিজিবির নিরাপত্তায় ‘সেন্টমার্টিন ক্রজ’ নামে একটি স্পিড যোগে প্রতিনিধি দলটি রাখাইনের মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।  এই দলে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। এদের মধ্যে শালবন শরণার্থী ক্যাম্পের ১৪ জন, লেদারের ৪ জন ও জাদিমুড়া  ক্যাম্পের ২ জন রয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রথমবারের মতো শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে যাত্রা করল।

এই সফরের উদ্দেশ্য হলো রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযোগী কি না তা দেখা উল্লেখ করে  আরআরআরসি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা রাখাইনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাওয়া হচ্ছে। মূলত দেশটির সরকার সম্ভব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন পরিদর্শনে যাওয়া। ফেরার পর আরও বিস্তারিত বলা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে। কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন বলেন, তিন নারীসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা রাখাইন মংডুতে ৯টার পর রওনা হয়েছি। বিকেলে ফেরার কথা রয়েছে। সে দেশে প্রত্যাবাসন অনুকূল পরিবেশ দেখতে এই যাত্রা তাদের।

রাখাইনে সফরে থাকা রোহিঙ্গা মো. সেলিম জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মিয়ানমারের রাখাইনে রওনা দিয়েছি। মূলত আমরা সেখানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা সেন্টারগুলো দেখবো। এছাড়া সেখানকার আশপাশের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখার কথা রয়েছে। এ যাত্রা আনন্দের কারণ প্রায় ছয় বছর পর অন্তত নিজ দেশে (মিয়ানমার) দেখার সুযোগ হবে।

এই উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো মন্তব্য করে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. কাশেম বলেন, সে দেশের পরিস্থিতি কতটা অনুকূল তা প্রতিনিধি দল রাখাইন ঘুরে এলে আরও পরিষ্কার হবে। তবে আমরা যারা মিয়ানমারের থেকে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি, তারা সবাই সে দেশে নিজস্ব গ্রামে ফিরতে ইচ্ছুক। অন্য কোনো জায়গায় না।

এদিকে, বর্তমানে চীনের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৫ মার্চ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মংডু আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউয়ের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। সেসময় সাত দিনে ১৪৭টি পরিবারের প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই শেষে ২২ মার্চ তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

আরআরআরসি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল যে এক হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে পরিচয় যাচাই-বাছাই করেছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এই সফরের পরে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। প্রত্যাবাসনের তারিখ সুনির্দিষ্ট না হলেও এই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান এবং রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে ঘোষণা দেয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নিলেও, এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো সম্ভব্য প্রত্যানাসনের এই কার্যক্রম চলমান। 

 


মন্তব্য