বোনাস বৈষম্য: শিক্ষকদের অনেকেই কোরবানী দিতে পারেন না

বোনাস
বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা  © প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে চট্টগ্রামের একটি এমপিওভুক্ত স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছেন রবিউল ইসলাম (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শতভাগ বোনাস পেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বঞ্চিত। একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর বোনাস বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ। এই বেতন ও বোনাস দিয়ে একজন শিক্ষক কীভাবে কোরবানীর ঈদ করবে?

তিনি আরও বলেন, এছাড়া বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি সেখানে এত অল্প বেতন আর বোনাসে কোনোভাবেই একজন শিক্ষক পরিবার নিয়ে চলতে পারে না। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শামীমুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, সরকারি চাকুরিজীবীরা শতভাগ ঈদ বোনাস পেলেও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা পান মাত্র ২৫ শতাংশ, যা দিয়ে সম্মানের সাথে কোরবানী দেওয়া খুবই কষ্টকর!

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থানার বেসরকারি স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা অত্যন্ত কষ্ট ও অনুতাপের। বর্তমান সময়ে চার হাজার টাকা উৎসব ভাতায় কিছুই হয় না। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই সামান্য টাকায় কোনোভাবেই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। ফলে বেসরকারি শিক্ষকদের মনে নেই ঈদের আনন্দ। 

এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির মুখে ২০০৪ সালে থোক বরাদ্দ থেকে শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু গত ১৯ বছরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, ২৫ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার টাকা, উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপক ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, টাইম স্কেলপ্রাপ্ত প্রভাষক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৯ হাজার টাকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৩ হাজার, প্রভাষক/গ্রন্থাগারিক, সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেলপ্রাপ্ত) ২২ হাজার, প্রদর্শক/সহকারী গ্রন্থাগারিক/শরীর চর্চা শিক্ষক/ সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেল ব্যতীত) ১৬ হাজার এবং সহকারী শিক্ষক (বিএড ব্যতীত) ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলে বেতন পান। অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে টাইম স্কেল পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির বেতন স্কেল ৯ হাজার ৭০০ টাকা, টাইম স্কেল ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ৯ হাজার ৩০০ টাকা, ল্যাব সহকারীদের ৮ হাজার ৮০০ টাকা, টাইম স্কেল পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির বেতন স্কেল ৮ হাজার ৫০০ টাকা, আর টাইম স্কেল ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন স্কেল ৮ হাজার ৩৫০ টাকা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেসব মৌলিক বৈষম্য রয়েছে তার নিরসনের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমরা আবেদন পাঠিয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি।

তিনি আরও বলেন, যে বেতন ও বোনাস একজন শিক্ষক পায়, তাতে কোরবানী দেয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় ছেলেমেয়েদের ঈদে কোন জিনিস কিনে দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে বোনাস বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসাবে আমারা মুরগী জবাই দিয়েছি। তবুও আমাদের কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই।  


মন্তব্য