ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মৌখিক নিয়োগ স্থগিত, কর্মচারীদের অবস্থান

ঢাবি
  © মোমেন্টস ফটো

কোন প্রকার নিয়মের তোয়াক্কা না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর দেওয়া ৪২ জনের নিয়োগ স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই স্থগিতাদেশকে ‘অমানবিক ও অযৌক্তিক ’ আখ্যা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন স্থগিতাদেশ পাওয়া কর্মচারীরা। আজ বুধবার দুপুর দুইটা থেকে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কার্যসম্পাদনের জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে এবং সিলেকশন কমিটির ভাইবা ছাড়াই মৌখিকভাবে ৫৩ জনকে নিয়োগ দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। কিন্তু সম্প্রতি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে কোন লিখিত বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে হঠাৎ করে মৌখিকভাবে তাদেরকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হলে তারা আজ এই কর্মসূচি শুরু করেন।

অবস্থানরতদের ভাষ্য, ‘তারা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করলেও ১১ জনের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। এখনো ৪২ জন প্রার্থী অস্থায়ীভাবে কাজ করছে। ওই ১১ জনের ন্যায় বাকিদের চাকরিও স্থায়ী করা হবে এমন আশায় তারা নামে মাত্র বেতনে কাজ করছেন। কিন্তু এখন তাদের চাকরি স্থায়ী করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’

মো. সুমন মিয়া নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ এখানে কর্মরত। ভিসি স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্যারের মাধ্যমে আমাদের এখানে নিয়োগ হয়েছে। নাম মাত্র বেতনে আমরা গত ৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি, কোনো সমস্যা নাই। এমনকি কোভিডের সময়ও আমরা নিয়মিত কাজ করেছি। আমাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল যে, আমাদের চাকরি ধীরে ধীরে স্থায়ী হবে। যেমন আগে আমাদের সিনিয়রদের হয়েছে। কিন্তু গতকাল হঠাই আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পক্ষ থেকে।’ 

বাহালুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে যার মধ্যে বাজারদরের চেয়ে কম দামে পছন্দের ব্যক্তির কাছে পুরোনো কাগজ বিক্রি, অধিভুক্ত কলেজের প্রবেশপত্র ফি নগদে গ্রহণ ও লেনদেনে অস্বচ্ছতাসহ আরো বেশ কিছু অভিযোগ। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গেলে কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে তথ্য চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও হিসাব পরিচালক দুদকের চিঠির জবাবও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: কবি নজরুলের ‘অগ্নি-বীণা’র শতবর্ষ উদযাপনে ঢাবিতে সেমিনার

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূত কাজের সুযোগ নেই উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তাদেরকে মূলত অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এজন্য স্থায়ী করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বহির্ভূত ও অননুমোদিত কোনো কাজের সুযোগও নেই, সম্ভাবনাও নেই।’

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানাজায় অংশ না নেওয়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে ‘প্রতিবাদী মোনাজাত’ করেন বাহালুল হক চৌধুরী। এ ঘটনার পর আর অফিসে আসেননি বাহালুল। বাহালুলের পরিবার জানায়, তিনি অসুস্থ, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।

এরপর তাঁর অনুপস্থিতিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার স্বাক্ষরিত এক অফিসে আদেশে পরীক্ষা উপ-নিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।


মন্তব্য